ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

ছাত্র নির্যাতন

বিচারের কাঠগড়ায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের ৫ শিক্ষক

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৬:৫২ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক (দিবা) শাখার ছাত্র তাইফুর রহমান (নাহিয়ান)। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির‌্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহকারী শিক্ষককে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

বিচার শুরু হওয়া পাঁচ শিক্ষক হলেন- প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক (দিবা শাখা) মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক ফয়সাল শামীম, মো. আতিক, ফেরদৌসী সুমী ও তরিকুল আজম খান।

অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ.ন.ম. সামসুল আলমসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অগ্রসর হবার মতো পর‌্যাপ্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য উপাদান না থাকায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষ।

তারা বলছেন, নির‌্যাতনের ঘটনায় কখনোই অধ্যক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। অধ্যক্ষকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি। অধ্যক্ষ ছাড়াও অব্যাহতি পাওয়া অন্য তিনজন হলেন, প্রতিষ্ঠানটির শরীরচর্চা শিক্ষক প্রিতীষ বিশ্বাস, সিকিউরিটি গার্ড জিয়াউল হক জিয়া ও মাসুদ রানা।

নির্যাতনের ঘটনায় কখনোই অধ্যক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। অধ্যক্ষকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি। অধ্যক্ষ ছাড়াও অব্যাহতি পাওয়া অন্য তিনজন হলেন, প্রতিষ্ঠানটির শরীরচর্চা শিক্ষক প্রিতীষ বিশ্বাস, সিকিউরিটি গার্ড জিয়াউল হক জিয়া ও মাসুদ রানা

২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবা এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য শফিকুর রহমান। ওইদিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত।

আরও পড়ুন

এরপর তদন্তে নেমে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ সামসুল আলমসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে, ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তাকে মানসিক চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করানো হয়।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আদালত থেকে জামিন নেন ৯ আসামি।

গত ৭ মার্চ ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। নির্ধারিত দিনে আদালত প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক (দিবা শাখা) মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক ফয়সাল শামীম, মো. আতিক, ফেরদৌসী সুমী ও তরিকুল আজম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২০ মে দিন ধার্য করেন।

ওই দিন আদালত প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ.ন.ম. সামসুল আলম, শরীরচর্চা শিক্ষক প্রিতীষ বিশ্বাস, সিকিউরিটি গার্ড জিয়াউল হক জিয়া ও মাসুদ রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অগ্রসর হবার মতো পর‌্যাপ্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য উপাদান না থাকায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন। বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, মামলার নথি চার্জ শুনানির জন্য নেওয়া হলো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ২৪১(ক) ধারা মোতাবেক অব্যাহতির আবেদনের সমর্থনে উল্লেখ করেন যে, আসামিদের বিরুদ্ধে নালিশি দরখাস্তে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আসামিরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো কোনো ভিত্তি নেই বিধায় তারা অব্যাহতি পেতে পারেন।

তদন্তে নেমে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ সামসুল আলমসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে, ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তাকে মানসিক চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করানো হয়

অন্যদিকে, অভিযোগ গঠন বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে আর্জি রাখেন, এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো পর‌্যাপ্ত উপাদান বিদ্যমান আছে। ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে।

এরপর আদালত বলেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনলাম। মামলার নালিশি দরখাস্তসহ নথিতে সংরক্ষিত অন্য কাগজাদি পর‌্যালোচনা করলাম। পর‌্যালোচনায় নালিশি দরখাস্তে বর্ণিত মো. নাসির উদ্দিন, ফয়সাল শামীম, মো. আতিক, ফেরদৌসী সুমী ও তরিকুল আজম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো যুক্তিগ্রাহ্য উপাদান বিদ্যমান আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। ফলে এই আসামিদের পক্ষে দাখিল করা অব্যাহতির দরখাস্ত নামঞ্জুর করা হলো।

আরও পড়ুন

একই সঙ্গে আদালত বলেন, পর‌্যালোচনায় নালিশি দরখাস্তে বর্ণিত আ.ন.ম. সামসুল আলম, প্রিতীষ বিশ্বাস, জিয়াউল হক জিয়া ও মাসুদ রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অগ্রসর হবার মতো পর‌্যাপ্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য উপাদান না থাকায় তাদের পক্ষে অব্যাহতির দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো। সে আলোকে তাদের ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ২৪১(ক) ধারা মোতাবেক এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

এরপর সার্বিক পযালোচনায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গঠিত অভিযোগ পাঠ করে শোনানো হলে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী শফিকুর রহমান উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক শাখায় ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গভর্নিং বডির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তার ছেলে তাইফুর রহমান নাহিয়ান ২০২২ সালে ওই স্কুলের নবম শ্রেণির মানবিক (দিবা) শাখার ছাত্র ছিল।

আসামিরা নাহিয়ানের প্রতি বিরূপ আচরণসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। তারা কারণে-অকারণে নাহিয়ানকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখা, ছোট করে কথা বলা, অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে হেয় করা এবং বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখাতেন। একপর্যায়ে নাহিয়ান শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়

শফিকুর রহমান গভর্নিং বডির অভিভাবক প্রতিনিধি থাকাকালে প্রতিষ্ঠানটির বাংলা মাধ্যম দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনকে (দুই নম্বর আসামি) সাময়িক বরখাস্ত এবং কুকীর্তির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হয়। সেই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন শফিকুর রহমান। এসময় নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর থেকে আসামিরা শফিকুর রহমান ও তার ছেলে নাহিয়ানের প্রতি বিরূপ আচরণসহ শারীরিক ও মানসিক নির‌্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। তারা কারণে-অকারণে নাহিয়ানকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখা, ছোট করে কথা বলা, অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে হেয় করা এবং বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখাতেন। একপর‌্যায়ে নাহিয়ান শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী সাদেকুল ইসলাম ভুইয়া জাদু জাগো নিউজকে বলেন, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক (দিবা) শাখার ছাত্র তাইফুর রহমান নাহিয়ানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির‌্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে শিশু আইনের ৭০ ধারায় বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ৭০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলেন, আদালত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আ.ন.ম. সামসুল আলমসহ চারজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। নির‌্যাতনের ঘটনায় কখনোই অধ্যক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। অধ্যক্ষকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করবো।

অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজমুল শাকিব জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। চারজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমরা মামলার বিচারকার্য ফেস করবো।

জেএ/এমকেআর/এমএস