ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

সাজা নিয়ে মাথাব্যথা নেই: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:৩১ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে স্থায়ী জামিন পেয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন। রোববার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত তাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং জামিন দেন।

আদালতের আদেশের পর ঢাকার কাকরাইলস্থ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাজা-অসাজা ছোট্ট জিনিস। আমি বৃহত্তর ছকের মধ্যে রয়েছি। আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, আমরা নতুন পৃথিবী গড়বো, আমরা তিন শূন্যের পৃথিবী গড়বো। থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড। এগুলো (বিচার, সাজা) ছোটোখাটো বিষয়। সাজা কী দেবে না দেবে, এগুলো নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস পরিষ্কার করি। আপনাদের জানানো দরকার। সরকার বারবার বলছে, এই মামলা সরকার করেনি। আপনারা (সাংবাদিকরা) তো সাক্ষী, আপনারা তো কিছু বলছেন না। এটি (মামলা) কি সরকার করলো না শ্রমিকরা? আপনারা বারবার বলেন, এটি মিথ্যা কথা। কলকারখানা অধিদপ্তর সরকারের অধিদপ্তর, সে করেছে। শ্রমিকরা করেনি।

ড. ইউনূস বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ছিল আমাদের স্বপ্ন। আমরা পৃথিবীকে বদলাতে চাই, দারিদ্র মুছে ফেলতে চাই। এটাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেগেছিলাম। জানি না ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে না হবে। আমাদের কোনো কিছু জানা ছিল না। আমরা গিয়েছি। প্রতিটি খুঁটিনাটি দেখে দেখে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে গ্রামীণ ব্যাংক আস্তে আস্তে প্রসারিত হলো। এটি হয়ে গেল আমাদের অপ্রত্যাশিত বীজতলা, স্বপ্নের বীজতলা। আমরা স্বপ্ন দেখি আর বীজ বুনি এটার মধ্যে। সেটি ক্রমে ক্রমে আমরা প্রসারিত করলাম নানা দিকে। স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে গেলাম, প্রযুক্তির দিকে নিয়ে গেলাম, একটার পর একটা! আজকে যা কিছু করছি, সবকিছুর বীজতলা ছিল গ্রামীণ ব্যাংক।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হলো। বীজতলা রয়ে গেলো একদিকে, আমাদের লোকজন যারা খেটেছে, তারা রয়ে গেলো আরেক দিকে। আমরা যাবো কোথায়? আবার আস্তে আস্তে বড় করলাম। কী করেছি আমরা? আমরা বলেছি, চাকরির পেছনে মানুষ ঘুরবে না। চাকরি মানুষের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ হলো উদ্যোক্তা। তার জন্মই হয় উদ্যোক্তা হিসেবে। এই (চাকরি) কাঠামো ভুল। এর পেছনে আমরা লাগলাম। ব্যাংকিং সেক্টরের ভুল কাঠামোর কারণে মানুষ আজ চাকরির পেছনে ছুটছে। চাকরি হলো দাসত্বের একটা জিনিস। আপনি একজনের জন্য জান দিয়ে খাটবেন, মাসের শেষে দিনের শেষে আপনাকে দেবে রোজগারের সামান্য অংশ। এই দাসত্ব থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের নমুনা দিলাম। গ্রামের অশিক্ষিত মহিলা অল্প-স্বল্প টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে নেমে গেছে। কে বলে, উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই? নিয়ে আসলাম সামনে, যেন উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা উন্মুক্ত করতে পারি। মূল অর্থনৈতিক তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করলাম।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দারিদ্রসহ পৃথিবীর যত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তার গোড়ায় হলো আমাদের মূল তাত্ত্বিক ব্যবস্থা। সেটার পেছনে আমরা লাগলাম। আমরা একটা ইমাজিনেশনকে (কল্পনা) গুরুত্ব দিলাম। ইমাজিনেশনই হচ্ছে মানুষের মূল শক্তি। ইমাজিনেশন না থাকলে কিছু হবে না। তাত্ত্বিক ব্যবস্থার মধ্যে ব্যবসা হলো মূল সমস্যা। মুনাফার সর্বোচ্চকরণ হলো ব্যবসা, এটি ভুল তথ্য। মানুষ এমন না যে, মুনাফার নেশায় সরে যাবে। মুনাফার ড্রাগ তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কাজেই আমরা মূল মানুষটা আবিষ্কার করতে চাই। যে মূল মানুষ, সে মানুষের উপকার করতে চায়। সেটাকে উন্মুক্ত করতে হলে ব্যবসাকে নতুন কাঠামোতে আনতে হবে। তখনই আমরা বললাম, সামাজিক ব্যবসা। এই সামাজিক ব্যবসার খাতিরে, শিক্ষার খাতিরে… শিক্ষা ব্যবস্থাটাও একটা চিন্তার কারাগার। এই কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা বললাম, শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলতে হবে। সেখানে মানুষ চাকরির জন্য লেখাপড়া করবে না। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য লেখাপড়া করবে। ব্যবসাকে বললাম মুনাফার পেছনে ছুটবে না, ব্যবসা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পেছনে ছুটবে। সেটাকেই আমরা নাম দিলাম সামাজিক ব্যবসা।

এফএইচ/কেএএ