হাকালুকি হাওরের মালাম বিল রক্ষায় হাইকোর্টের রুল
হাকালুকি হাওরের অন্তর্ভুক্ত মালাম বিল ও বিলের জলাবনে গাছ কাটা, স্থাপনা নির্মাণ ও শ্রেণি পরিবর্তন থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা এবং আইনের না মেনে পুনরায় ইজারা দেওয়া কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওরের সীমানা নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে ক্ষতিকারক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আইনানুযায়ী হাওরটি রক্ষা ও সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও আদালত জানতে চেয়েছেন জারি করা রুলে। একই সঙ্গে মালাম বিলের ইজারা বাতিল চেয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করতেও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না, তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শামীমা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
এর আগে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওর ও মালাম বিল রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৭ নভেম্বর জনস্বার্থে ওই রিট করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
বেলা জানায়, দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ি ও কুলাউড়া উপজেলা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল হাওরের ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত এ হাওরে ছোট–বড় অনেক বিল রয়েছে, মালাম বিল যেগুলোর অন্যতম। মালাম বিলটি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজাজুড়ে অবস্থিত, যার আয়তন ৪২৮ দশমিক ৯২ একর। বিলটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে (১৪২৭-১৪৩২ বঙ্গাব্দ) জেলা প্রশাসক মানাদী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি বরাবর মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ইজারা দেন।
রিট আবেদনকারীপক্ষ আরও জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে ওই বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ (হিজল, করচসহ অন্যান্য জলজ প্রজাতি) কেটে মানাদী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ও ১০-১২ বিঘা জমি চাষের উপযোগী করে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বড়লেখা থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে জলজ প্রজাতির বৃক্ষ নিধন ও বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ থাকলেও মামলায় ইজারাগ্রহীতাকে বিবাদী করা হয়নি এবং ইজারা চুক্তি বাতিল করা হয়নি। এ অবস্থায় রিটটি করে বেলা।
মামলার বিবাদীরা হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি), পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, মৌলভীবাজারের বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ), মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, বড়লেখা পুলিশ স্টেশনের অফিসার-ইন-চার্জ, বড়লেখা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এবং মানাদী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি।
এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম