ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

বছরজুড়ে যেমন ছিল সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন

মুহাম্মদ ফজলুল হক | প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

> রাষ্ট্রপতি নিয়োগে রিটে লাখ টাকা জরিমানা
> ২৪তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
> ড. ইউনূস ইস্যুতে পদত্যাগ
> ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বিচারপতির এমন মন্তব্যে আলোড়ন
> তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা

বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। আসছে ২০২৪। বছরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। চারদিকে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। তবে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই আলোচনা শুরু হয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। একই সঙ্গে বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনাসমূহের মধ্যে ছিল রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে রিট করে আইনজীবীর লাখ টাকা জরিমানা বহাল, দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জেলা জজের কামরায় গিয়ে বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের ঘটনায় আইনজীবীদের তলব, বিএনপি নেতা ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার বিষয়ে রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হাইকোর্টের নির্দেশে বহিষ্কার। ধানমন্ডিতে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি বাড়ি নিয়ে বিতর্ক। উপজেলা পরিষদ নিয়ে রায়, মানবাধিকারকর্মী আদিলুরের জামিন শুনানিতে ‘দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বিচারপতির এমন মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনা।

এছাড়া সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিদেশি প্রভাব, নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরানের পদত্যাগ, বাবা না থাকলে মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে রায়, উচ্চ আদালতের রায় প্রতিপালন না করায় কুমিল্লা জেলা আদালতের এক বিচারককে হাইকোর্টে এক মাসের সাজা, আবার স্থগিত, হেফাজতে নারী মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন, হিন্দু নারীদের ডিভোর্সের অধিকার দিতে রুল, ধারাভাষ্য থেকে ওয়াকার ইউনিসের নাম প্রত্যাহারে রুল, মুচলেকা দিয়ে শিশু বক্তার জামিন, আদালত অবমাননার কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সচিব ও আইজি প্রিজন্সকে তলব, হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনার রায়, উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা নিয়ে রায় ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে বিচার। এছাড়া বিভিন্ন আলোচিত ইস্যুতে রিট ও রায়ের কারণে মানুষের দৃষ্টি ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে।

jagonews24

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে রিট খারিজের আদেশ বহাল, আইনজীবীকে জরিমানা:

২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নাম ঠিকানাসহ প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। গেজেট প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজের আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে রিটকারী আইনজীবীর ১ লাখ টাকা জরিমানাও বহাল রাখা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং গেজেট প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৭ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন এম এ আজিজ। ১৮ মে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ রিটকারীর আপিল আবেদন খারিজ করে। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়ে অযৌক্তিক রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করায় আইনজীবী এম এ আজিজ খানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছিলেন এম এ আজিজ খান।

jagonews24

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নিয়োগ

২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। এ নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ১২ সেপ্টেম্বর জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হলে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বিচারপতির মন্তব্য

‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’, হাইকোর্টের একজন বিচারপতির এমন মন্তব্যে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’ ১০ অক্টোবর বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আদালত জানতে চান, জামিনের আবেদন দেওয়া হয়েছে কি না? আইনজীবী বলেন, দেওয়া আছে। এ সময় আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাহলে তাদের দুই বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না? এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’ এ মন্তব্যের কারণে বিচারপতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ করেন। ওইদিনই প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে কথাবার্তা বলার সময় আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।

jagonews24ইমরান, পরিবারসহ

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরান আহম্মদ ভূঁইয়া মার্কিন দূতাবাসে

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানানো ও গণমাধ্যমে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনায় আসা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে ৭ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয়। এরপর বিকেলে নাটকীয়ভাবে পরিবার নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে হাজির হন এমরান আহম্মদ। হয়রানির অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক আশ্রয় চান দূতাবাসের কাছে। নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে ওঠেন। তিনি দাবি করেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তাই মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। তবে তার কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফেরেন।

তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তোলপাড়

হাইকোর্টে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনার করা রিটে কোনো পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুনঃউৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্য সচিবের প্রতি নির্দেশনা চেয়েছিলেন। ২৮ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত রুল শুনানির মধ্যে বাদীপক্ষের এক সম্পূরক আবেদনে এ আদেশ দেন। এদিকে ওই আদেশের পর হাইকোর্টের এ বেঞ্চের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান বিএনপির আইনজীবীরা। এসময় এজলাস কক্ষে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়।

jagonews24

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ ৫ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্তকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২১ আগস্ট জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী। সভায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এর আগে গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর অধ্যায়-২ এর ৮ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জন্য পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তবে এ সিদ্ধান্ত বিধিসম্মত হয়নি বলে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন এবং পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২৩ আগস্টের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরি খাতুন নামে এক নবীন ছাত্রীকে দুই দফায় রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ করা হয় বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে। এতে চারটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। প্রতিটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মিলে ও এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়। এরপর তাদের স্থায়ী বহিষ্কার কেন করা হবে না এ ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

jagonews24

‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম

মুচলেকা দিয়ে ‘শিশু বক্তা’ রফিকুলের জামিন

ভবিষ্যতে কোনো ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না এবং প্রতি মাসে থানায় দুবার হাজিরা দেবেন, এমন শর্তে চার মামলায় ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলামকে জামিন দেন হাইকোর্ট। ২৮ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল রাতে রফিকুলকে নেত্রকোনার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব। পরদিন গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এরপর গাজীপুরের বাসন এবং রাজধানীর মতিঝিল ও তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

বিচারককে সকালে এক মাসের কারাদণ্ড বিকেলে স্থগিত জামিন

বিদায়ী বছরের ১২ অক্টোবর আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বর্তমানে আইন মন্ত্রনালয়ে সংযুক্ত) মো. সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। সোহেল রানাকে সাতদিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে রিট খারিজ করে এ রায় দেন আদালত।

এর আগে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ১২ অক্টোবর আদালত অবমাননায় সোহেল রানাকে (কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এখন আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত) এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে একই বেঞ্চ সোহেল রানাকে ৩০ দিনের জামিন দেন। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ওই দিনই আবেদন করেন তিনি। সেদিন ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তার কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিতের আদেশ দেন। একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে সোহেল রানার করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সোহেল রানা।

আপিলের শুনানিতে ৬ ডিসেম্বর সোহেল রানার আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (সোহেল রানা) অনুতপ্ত। নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করে তাকে চার্জ (আদালত অবমাননার দায়) থেকে অব্যাহতি দিয়ে আপিল নিষ্পত্তির নিবেদন রাখছি; এ থেকে শিক্ষা নিয়ে যাতে তিনি ভবিষ্যতে একজন ভালো বিচারক হওয়ার সুযোগ পান।’ এদিকে, আদালত অবমাননায় এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সোহেল রানার আপিলের ওপর রায় ঘোষণা পিছিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ রায়ের জন্য আগামী ২৩ জানুয়ারি দিন রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোহেল রানার করা আপিলের ওপর ৬ ডিসেম্বর শুনানি শেষে আপিল বিভাগে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

বাবার পরিচয় নেই, মাকে অভিভাবক স্বীকৃতি দিয়ে হাইকোর্টের রায়

বিদায়ী বছরের শুরুতে ২৪ জানুয়ারি শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে তিনজনের যে কোনো একজনের নাম দিয়ে শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা যাবে। সব ফরম সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয় রায়ে। আবেদনকারীদের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা জানান, এ রায়ের ফলে মায়ের অধিকারও আংশিক প্রতিষ্ঠিত হলো। আর মা-বাবার পরিচয়হীন যে কোনো শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো।

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) পর্যায়ে বাবার নাম না দিয়ে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সুযোগ নিয়ে ১৪ বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ শিরোনামে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালে ওই রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেওয়া হয়।

বিচারককে অশালীন কথাবার্তা, জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতিদের তলব

বিদায়ী বছরের ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাক্ষণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এরপর একই ঘটনায় খুলনা বার সভাপতি, পিরোজপুর বারের সভাপতি, নীলফামারী, কুষ্টিয়া বারের সভাপতি-সম্পাদককে তলব করেন হাইকোর্ট। বিচারকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের কারণে আদালত কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেন এসব আইনজীবী নেতাকে।

jagonews24

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিচার কার্যক্রম চলমান। ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে এ মামলায় এখন সর্বশেষ ধাপে যুক্তিতর্ক উপস্থপন চলছে।

হিন্দু নারীদের ডিভোর্সের অধিকার দিতে রুল

বিদায়ী বছরের ১৪ মে হিন্দু বিবাহ আইনে নারীদের ডিভোর্সের অধিকার, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হিন্দু বিবাহ আইন বিয়ে রেজিস্ট্রেশন কেন বাধ্যতামূলক করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। এর আগে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্টসহ ৯টি সংগঠন হিন্দু নারীদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে ও হিন্দু বিবাহ আইনের অসংগতি দুরীকরণে একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

jagonews24

ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিন

হেফাজতে নারীর মৃত্যু

হাইকোর্টের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন বিদায়ী বছরের ৫ এপ্রিল নওগাঁয় র‌্যাবের হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত র‌্যাবের সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কমিটিতে জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়। একজন সচিবের নেতৃত্বে এ কমিটি গত আগস্ট মাসে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি হাইকোর্ট। আদালত এ বিষয়ে রুল শুনানির দিন রেখেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হাইকোর্টে অবৈধ-আপিলে স্থগিত

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন, এটা অবৈধ। চিঠিপত্রে উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করে, এখন আর উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে। ইউএনও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করলেও তিনি উপজেলা পরিষদের কাছে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবেন। ২০১০ সালে ১৭টি বিভাগ হস্তান্তরিত হয়েছিল। তার মধ্যে উপজেলা পরিষদও হস্তান্তরিত হয়েছে। ইউএনও হস্তান্তরিত দায়িত্ব পালনের জন্য চার্টার অব ডিউটিজ আছে। তিনি এগুলো করবেন। এটার ওপরে এসে ৩৩ ধারায় তাকে একচ্ছত্র দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট বলছেন, এটা বাতিল। একচ্ছত্র থাকতে পারবে না। ইউএনওকে উপজেলা পরিষদের অধীনে কাজ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পৃথক তিনটি রিটে জারি করা রুল আংশিক মঞ্জুর করে গত ২৯ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের দেওয়া রায়ের ২৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ২৫ মে প্রকাশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ৫ জুন পর্যন্ত এ রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস