ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

প্রধান বিচারপতি

আমাদের সুনাম নির্ভর করে অধস্তন আদালতের ওপর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:০৫ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৩

বিচারব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে দীর্ঘমেয়াদি জুডিশিয়াল প্ল্যান তৈরির কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিষয়ে তিনি বলেন, জেলাপর্যায়ের আদালতে আমার যে সহকর্মী বিচারকরা কর্মরত আছেন, তাদের বলবো, তারা যেন কখনোই সময়ের অপচয় না করেন, তারা অহর্নিশি বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে কাজ করেন।

রোববার (৮ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

প্রধান বিচারপতি বাবার কথা স্মরণ করে বলেন, সংবিধানের মূল কপিতে আমার বাবার সই রয়েছে। প্রতিবার সংবিধানটি হাতে নিলে মনে হয় বাবা যেন বলছেন- এ আমাদের পবিত্র আমানত, লাখো শহীদের রক্তের আখরে লেখা এই সংবিধান থেকে তুমি কখনো বিচ্যুত হইয়ো না।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যদের উপস্থিততে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমি চাইবো বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে যেন কোনোভাবে রাজনীতিকরণ করা না হয়। এখানে বিচারক ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের সম্মিলিত এবং মেধাপুষ্ট দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই কেবল সুবিচারের লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। তবেই বিচার বিভাগের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

মামলাজট ও বিলম্বিত বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলাজট এবং বিলম্বিত বিচার প্রকারান্তরে সুবিচারের ধারণাকে বিনষ্ট করে। কীভাবে এটি থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত করা যায় সেই কার্যকর পথ ও প্রক্রিয়া বের করতে হবে।

দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, সংবিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিচার প্রশাসনকে রাখতে হবে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন এবং সোশ্যাল জাস্টিস তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা দেশ ও জাতির জন্য গর্বের। আমার দায়িত্ব পালনকালে আমার সতীর্থ বিজ্ঞ বিচারক এবং আইনজীবীদের সুচিন্তিত পথ ধরে একটি দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো।

অধস্তন আদালতগুলো বিচার বিভাগের ‘প্রেস্টিজ পয়েন্ট’ বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের সাধ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অসহায় মানুষের কল্যাণ যেন নিশ্চিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে দায়িত্ব পালন করবেন। অধস্তন আদালতগুলোকে আমি বিচার বিভাগের প্রেস্টিজ পয়েন্ট বলে মনে করি। অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে বিচারক হিসেবে আমাদের সবার সুনাম সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে অধস্তন আদালতের ওপর।

বিচারকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, স্মরণ রাখতে হবে যে বিচারকের চরিত্রের সঙ্গে অহেতুক তাড়াহুড়া, হঠাৎ ধৈর্য হারানো, আইনজীবীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, আদেশ ও রায় লেখার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি আচরণ কখনোই যায় না। তাই সচেতনভাবে এসব পরিহার করে চলতে হবে।

আইনজীবীদের সার্বিক সহায়তা একজন বিচারকের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। এছাড়া বিচারকদের দায়িত্ব পালনের প্রতি সব সময় সহায়তামূলক সাহায্যের মনোভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে বারের সদস্যদের ও অন্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সাক্ষী ও ভিকটিমের সুরক্ষার জন্য দেশে এখনপর্যন্ত কোনো আইন হয়নি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, স্থানীয় প্রভাব ও ভীতিতে আক্রান্ত সাক্ষীরা সমন জারি সত্ত্বেও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন না। এলেও ভয়ে তারা সত্য গোপন করেন। ফলে মামলার বিচার প্রলম্বিত হয়। আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, স্থানীয় প্রতাপ-প্রভাবের কারণে এমনটি হয়। অনেক সময়ই সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট বিচারকের কলম কার্যকরভাবে সচল হয় না, বছরের পর বছর প্রলম্বিত হয় বিচার। সাক্ষীরা হয়ে পড়ে অনাগ্রহী। এসব অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।

সংবর্ধনায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর–উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল উপস্থিতি ছিলেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ অন্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিপূর্ণ ছিল। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতাদের দেখা যায়নি।

এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম