খালেদাকে চিকিৎসায় বিদেশে পাঠাতে আইন মন্ত্রণালয়ের ‘না’
চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাবে না বলে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় এই মতামত দিয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
রোববার (১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান। নির্বাহী আদেশে দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনি মতামতের জন্য খালেদা জিয়ার ভাইয়ের সর্বশেষ যে দরখাস্ত সেটা হলো-তার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া। সেটা আইনি মতামতের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আইনি মতামত দিয়ে সেটা কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে, কোর্টে যেতে হবে
‘আপনাদের প্রশ্ন আমরা কী আইনি মতামত দিয়েছি-প্রথম কথা হচ্ছে প্রথম যে দরখাস্তটা ছিল যেটা ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়। সেই দরখাস্তে ছিল যে, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসা যেন হয়, সেই ব্যবস্থা করা। তখন সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন দুটি শর্তে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।’
আনিসুল হক বলেন, ‘এটা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০১(১) এর ক্ষমতাবলে। সেখানে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই দুটো শর্ত হচ্ছে-তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন ও তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সেই শর্ত মেনে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় ফিরে যান। সেভাবেই দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়। সেখানে শুধু এটুকু জিনিস উন্মুক্ত ছিল, তা হচ্ছে তাকে দেওয়া হয়েছিল ছয় মাসের, ছয় মাস পর বৃদ্ধি করা যাবে কি না সেই ব্যাপারে ছিল। সেটা (দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ) আটবার বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না। আমরা সেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় উপধারা-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
‘মতামত হচ্ছে- ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সেটা একটা পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রান্সজেকশন, এটা আর খোলার উপায় নেই।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী যে মতামত দিয়েছেন তাই আইনের অবস্থান: আইনমন্ত্রী
তাহলে বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে তার পরিবারকে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে-জানতে চাইলে বলেন, ‘যেটা আমি আগেও বলেছি, বারবার বলছি। তাকে যে আদেশবলে ৪০১ ধারার আদেশ বলে দুটি শর্তে সাজা বাতিল করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিদেশে চিকিৎসা নিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হবে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতে যাওয়ার বিষয়টি তো তাদের কাছে সবসময়ই আছে। ব্যাপারটা আরেকটু পরিস্কার করি, আমাদের এ উপমহাদেশে ৪০১ ধারায় সরকার যখন ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সেটা আদালতে চ্যালেঞ্জ যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, এখন যে আদেশ আছে সেটা বাতিল করে তাকে যদি কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারবেন। এ অবস্থায় (দণ্ড স্থগিত থাকা অবস্থায়) তার আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
দণ্ড স্থগিত বাতিল করবেন নাকি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাতিল করাটা অমানবিক হবে। বাতিল করবো না।’
দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারির সাতদিনের মধ্যে তারা আবার আবেদন করেছেন-এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলাপ-আলোচনা নেই, হয়ওনি কোনো সময়।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার দুর্নীতি নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল
এর আগে খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরপর ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে তাকে জেলে যেতে হবে। এরপর আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন তাহলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।
রোববার দুপুরে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মতামত দিয়েছেন তাই আইনের অবস্থান এবং সেটাই সঠিক।
তিনি বলেন, আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে করা আবেদন যাচাই করে আজ মতামত দেওয়া হবে।
এদিকে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া। গত ৯ আগস্ট থেকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে তাকে কয়েক দফা সিসিইউতে নেওয়া হয়। তার লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরএমএম/কেএসআর/এমআইএইচএস/এমএস