আদিলুর-এলানের কারাদণ্ড: সন্তুষ্ট নয় কোনো পক্ষই
২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ কেউই সন্তুষ্ট নয়।
এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, আমরা রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা রায়ে সাজা বেশি প্রত্যাশা করেছিলাম। রায় পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেবো।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন ভুইয়া বলেন, এ মামলায় আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। সেখানে তারা খালাস পাবেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের দশ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও দেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগ করতে হবে। এটি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের প্রথম মামলা।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: অধিকারের আদিলুর-এলানের ২ বছরের কারাদণ্ড
রায় ঘোষণার পর দুজনকে পাঠানো হয়েছে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার।
তবে সরকারের ভাষ্য, সে রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। সে বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটির বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালান এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় করার চেষ্টা চালান, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।
জেএ/এমএইচআর/জিকেএস