ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর

বিচারকের অসুস্থতায় থমকে আছে মামলার আপিল শুনানি

মুহাম্মদ ফজলুল হক | প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৩

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। সেদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে চালানো হয় অতর্কিত গ্রেনেড হামলা। সেখানে মারা যান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে পড়ে ওই হামলায়। আজ সেই নৃশংসতার ১৯ বছর।

হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা করে। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনে। ২০০৮ সালের ১১ জুন মামলা দুটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় পুলিশ।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আরও ১১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানসহ ১৪ জন পলাতক এবং কারাগারে ২৭ জন। আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন ৯ জন।

বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। আপিলের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা এবং করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক বছর মামলাটি উচ্চ আদালতে ছিল শুনানির অপেক্ষায়। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর এর অবসান ঘটে। সেদিন এ মামলায় আসামিদের করা আপিল আবেদন ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানির শুরু হয়। তবে একজন বিচারক অসুস্থ থাকায় আপাতত মামলার কার্যক্রম বন্ধ। তিনি সুস্থ হওয়ার পর মামলাটির শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গ্রেনেড হামলা মামলার আপিলের শুনানি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যে আপিলগুলো ফাইল করা হয় সেগুলো শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। এ মামলায় প্রধান বিচারপতি একটি বেঞ্চ ঠিক করেছেন। সেখানে শুনানি শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি অসুস্থ। তিনি অসুস্থ থাকার কারণে কোর্ট বসছে না। আশা করা যাচ্ছে বন্ধের পর তারা বসবেন। বসলে আমরা তখন শুনানি শেষ করবো। কোর্টে শুনানি শুরু হলে যারা মৃত্যুদণ্ডের আসামি, যাদের ফাঁসির দণ্ডের রায় হয়েছিল, তাদের পক্ষে আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরবেন। পরবর্তীসময়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য (যুক্তিতর্ক) তুলে ধরবো। সময় বেশি লাগবে না।

মামলায় আপিল আবেদনটি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে সামনের শুনানিতে আরও ১০ থেকে ১২ কার্যদিবস লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল শুনানি শুরু

এ পর্যায়ে কোন মাসের কথা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হলো আদালতে বিচারপতিরা যেদিন বসবেন। সেদিন থেকে আমরা আশা করছি যে ১০-১২ দিনে শেষ হয়ে যাবে, ইন্শাআল্লাহ্। সামনে অবকাশ আছে। যদি অবকাশের আগেই শুনানি করা যেতে পারে, সম্ভবত আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে।

জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এটি এখন উচ্চ আদালতে। চলতি বছর, খুব কাছাকাছি সময়ে এ মামলার আপিল শুনানি শেষ হতে পারে। এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ চায় সব আসামির দণ্ড বহাল থাকুক

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালত আসামিদের যে দণ্ড দিয়েছেন, তা সব যেন বহাল থাকে। মামলাটি দেখে আইনগত বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। দণ্ড যাতে বহাল রাখা হয়, সেজন্য আর্গুমেন্ট করবো।

রাষ্ট্রপক্ষের আর্জি কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে এটা পড়ার প্রস্তুতি নিয়েছি, আমাদের প্রার্থনা থাকবে যে, বিচারিক আদালত (নিম্ন) অত্যন্ত সুলিখিত কারণ দেখিয়ে রায় দিয়েছেন। আমরা আশা রাখবো, মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের শাস্তিটা বহাল থাকবে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, ২১ আগস্ট নির্মম গ্রেনেড হামলা ছিল জাতীয় ষড়যন্ত্র। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। এ দেশের জনগণের দোয়া ও আশীর্বাদে। আইভি রহমানসহ যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমরা আশা করবো, প্রকৃত অপরাধীরা যাতে বিচারিক আদালতের পর উচ্চ আদালতে দণ্ড পায়।

আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল শুনানি ২৫ জানুয়ারি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, আপিল পেন্ডিং অবস্থায়। আমরা বলতে পারি, আপিলের মামলা চলছে। শুনানি শেষ হলে আমরা আশা করবো উচ্চ আদালতের রায়ে যেন বিচারিক আদালতের রায়ের দণ্ডগুলো বহাল থাকে।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জাগো নিউজকে বলেন, মামলায় আসামিপক্ষ থেকে আপিলের পেপারবুক পড়া শুরু হয়েছে। পেপারবুক পাঠ এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে একজন বিচারপতি অসুস্থ হওয়ায় এখন আর মামলাটি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসছে না। উনি (বিচারপতি) সুস্থ হওয়ার পর হয়তো কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসতে পারে। তখন পেপারবুক পাঠ শেষ করা হলে হয়তো মূল আর্গুমেন্ট শুরু হবে। আপাতত শুনানি হচ্ছে না।

মামলার প্রক্রিয়া

২০১৮ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। সে ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করতে ও আসামিদের করা আপিল শুনানি করা হচ্ছে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবে আসামি পক্ষ। আসামিদের ফাঁসি বহাল থাকলে তারা রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন। রিভিউতেও দণ্ড বহাল থাকলে অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন। তার পরে শুরু হবে রায়ের দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।

এফএইচ/এমএইচআর/জেআইএম