ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

রিট খারিজ, অর্পিত সম্পত্তি আইনের সব মামলা চলবে ট্রাইব্যুনালে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:১৭ পিএম, ০৮ জুন ২০২৩

অর্পিত সম্পত্তি আইনের তিনটি (৯, ১৩ ও ১৪) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এ আইনের সব মামলার বিচারকাজ এখন থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে। অন্য কোনো আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা চলবে না।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। অন্য দুজন হলেন- বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান।

এদিন আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। খুলনা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

রায়ে আদালত বলেন, অর্পিত সম্পত্তি আইনের ৯, ১৩ এবং ১৪ ধারা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি নয়। অর্পিত সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের অধীনে থাকবে এবং জেলা প্রশাসক প্রয়োজনে লিজ দিতে পারবেন।

এর আগে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন, ২০০১ এর তিনটি ধারা ৯ , ১৩ ও ১৪ চ্যালেঞ্জ করে পৃথক দুটি রিট করা হয়েছিল। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রুল খারিজ করে দেন।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, এ রায়ের ফলে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে সব মামলা এখন থেকে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। অন্য কোনো আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা চলবে না। অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে অন্য সব আদালতে চলমান মামলাগুলো বাতিল হয়ে যাবে। অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা ইজারা দেবেন—আইনের এমন বিধান বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর তিনটি ধারা ৯, ১৩ ও ১৪ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। দুটি রিটের এসব ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রুলটি ডিসচার্জ (খারিজ) করে দিয়েছেন। ফলে যে রিটের মাধ্যমে তারা তিনটি ধারাকে সংবিধান পরিপন্থী দাবি করেছিল সেটি কিন্তু এখন সংবিধান পরিপন্থী না। বরং যথাযথভাবে আইনটি করা হয়েছে। কারণ জেলা প্রশাসকের যদি এই প্রত্যপর্তন সম্পত্তি লিজ দেওয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাবে। কাজেই এটা সরকারের স্বার্থে জনগণের স্বার্থেই করা হয়েছে।

এই কারণে আদালত দুটি রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন, একই সঙ্গে স্থিতাবস্থার আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে যদি কারো আপত্তি থাকে তাহলে তাকে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। জেলা প্রশাসকের লিজ দেওয়া এবং বাতিল করার ক্ষমতা বহাল থাকলো।

আইনের ১৩ ধারায় প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তিসংক্রান্ত মামলার অ্যাবেটমেন্ট (বাতিল) কার্যধারা বন্ধ ও ট্রাইব্যুনালে দাবি উত্থাপন বিষয়ে বলা আছে। ধারাটির ভাষ্য, ‘সরকারি গেজেট প্রকাশের তারিখে যদি কোনো আদালতে এমন দেওয়ানি মামলা অনিষ্পন্ন থাকে, যা ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কোনো সম্পত্তিতে স্বত্ব দাবি করে বা তা অর্পিত সম্পত্তি মর্মে দাবি করে কোনো প্রতিকার প্রার্থনা করা হলে মামলায় সম্পত্তির যতটুকু জড়িত, ততটুকু বাবদ মামলাটি আপনা–আপনি অ্যাবেটেড (বাতিল) বলে গণ্য হবে।’

আর ১৪ ধারায় প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণ ও অস্থায়ী ইজারা প্রদান বিষয়ে বলা আছে।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, খুলনার সম্পত্তি তালিকাভুক্তি নিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে শ্যামল কুমার সিনহা রায় এবং চট্টগ্রামের এক সম্পত্তি নিয়ে মশিউর রহমান বেগ একই বছর আরেকটি রিট করেন। রিটে আইনের ৮, ১৩ ও ১৪ ধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১২ সালে রুল দিয়ে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির অবস্থান ও দখলের ওপর পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন ও ব্যাখ্যা জড়িত থাকায় এ–সংক্রান্ত রুল চূড়ান্ত শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন দেন।

রুলের ওপর শুনানি শেষে ২৩ মে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ৮ জুন দিন ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ রায় দেওয়া হয়।

এফএইচ/এমকেআর/জেডএইচ/এএসএম