ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ দিকে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর গাঁথুনির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসে। বর্তমানে স্তম্ভটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ দিকে।

সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ স্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে। জানা গেছে, স্তম্ভটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পাশাপাশি হাতে লেখা ’৭২-এর সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবীদের নামের তালিকা স্থান পাবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্মারক স্তম্ভ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন টাইলস বসানোর কাজ চলছে। টাইলস বসানো এবং অন্যান্য কাজ শেষ করার পর সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবীদের নামের তালিকা। এর পরই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে স্মারক স্তম্ভটি।

সুপ্রিম কোর্টে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যে স্থানটিতে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন ঠিক সেখানেই তাকে নিবেদন করে এই স্মারক স্মৃতি স্তম্ভটি স্থাপন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। পরদিন ১১ জানুয়ারি ‘দি প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ওই আদেশের অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে, যা একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি যারা সময়ে সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ দিকে

ওইদিনই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব কর্তৃক বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট। স্বাধীন বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের গোড়াপত্তন এভাবেই।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনে এসে শহীদ আইনজীবীদের নামফলক সংবলিত স্তম্ভ দেখতে না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তার সেই ইচ্ছার প্রতি সম্মান রেখে সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’। একই স্মারক স্তম্ভে তার প্রতিকৃতির পাশাপাশি হাতে লেখা ’৭২-এর সংবিধান ও শহীদ আইনজীবীদের নামের তালিকা স্থান পাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতির ১১৪ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ’ (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) আদেশ দ্বারা রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশের কার্যকারিতা দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আসেন বঙ্গবন্ধু। সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণের যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানেই নির্মিত হচ্ছে এই স্মারক স্তম্ভ।

উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমাদের সুপ্রিম কোর্ট, আজ আমাদের দেশে আইনের শাসন হতে চলেছে, তাদের আমাদের স্মরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে শহীদ আইনজীবীদের নামফলক দেখতে না পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন পিজি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে, এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের নাম লেখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা, যে যে সহকর্মীরা যারা শহীদ হয়েছেন—যদি এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহীদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ দিকে

উদ্বোধনের ৪৫ বছর পর ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো উদযাপন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট দিবস। এরপর থেকে প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রথম কার্যক্রম শুরু করেছিল। এ দিনটি সরকারি ছুটি।

কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওইদিন ছুটি প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ‘দৈনিক কার্যতালিকা’ (কজ লিস্ট) প্রণয়ন করেন এবং ওই তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট দিবসে সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এসময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমীন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোশিয়েশনের) সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলালসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলন।

সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আপিল বিভাগের সামনের চত্বরে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। আদালতের মূল ভবনের ভেতরে ফুলের বাগানের দক্ষিণ প্রান্তে এরই মধ্যে স্তম্ভ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ দিকে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের যে স্থানে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্তম্ভে টানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে শহীদ আইনজীবীদের নামের তালিকা।

তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধে অনেক আইনজীবী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে ৬০ জনের বেশি আইনজীবীর নামের তালিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে। এছাড়া আরও শহীদ আইনজীবীর নামের তালিকা সংগ্রহের জন্য দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে নোটিশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং আইনজীবী সমিতি থেকে কোনো শহীদ আইনজীবীর নামের তালিকা পাঠানো হলে তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ মোয়াজ্জাম হোছাইন।

তিনি বলেন, স্মারক স্তম্ভে বঙ্গবন্ধুর উদ্বোধনী ভাষণ সংবলিত তার প্রতিকৃতি স্থান পাচ্ছে। এরই মধ্যে স্মারক স্তম্ভের যে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে তা আরও পরিবর্ধন ও পরিমার্জন চলছে। এছাড়া নির্মাণকাজ শেষ হলেই তা উদ্বোধন করা হবে।

এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম