জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের ইতিহাস
দেশের প্রধান ও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের অবস্থান রাজধানী ঢাকায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের পাশেই বিশাল এক পুকুর ভরাট করে তৈরি করা হয় এ ঈদগাহ ময়দান।
এ বিষয় ঈদের আগের দিন শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সিনিয়র সাংবাদিক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান জাগো নিউজকে বলেন, এখন যেখানে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এটাতো একটা পুকুর ছিল। ১৯৮০ সালের মাঝামঝি সময়ে মনে হয় তৎকালীন সরকার পরিকল্পনা করার পরই মাটি ভরাট করা হয়। পুরোটাই বিশাল এক পুকুর ছিল। এ পুকুরে সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিংয়ের (ভবনের) ছবি রিফেকশন হচ্ছে এমন ছবি তোলা হতো।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ভবন এখন যেটাতে প্রধানবিচারপতির নেতৃত্বাধীন এজলাস বসেন সেই বিল্ডিংয়ের পাশ পযর্ন্ত বিস্তৃত ছিল জাতীয় ঈদগাহ ময়দান হওয়ার আগের পুকুরটি।
তিনি উদারহণ টেনে বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতায় আসলো তখন জাতীয় ঈদগাহ ময়দান তৈরি করা হয়। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে কুমিল্লা-রংপুর বিভিন্ন জায়গায় হাইকোর্ট সরিয়ে দেওয়া হয় (পরে যা বাতিল হয়ে গেছে)। ওই সময়টা ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালের দিকে ফুল মাঠ ভরাট শেষে জাতীয় ঈদগাহ তৈরির কাজ শেষ হয়। পরে ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে ঈদগাহকে জাতীয় ঈদগাহ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, খোলা ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে তৎকালীন সময়ে (১৯৮৫-১৯৮৬) সরকার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে একটি বিশাল পুকুর ভরাট করে ঐতিহাসিক জাতীয় ঈদগাহ ময়দান করে। যেখানে এখন লাখো মুসল্লী ঈদের নামাজে শরীক হন।
মূলত বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুইটি অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ। এটি ঢাকা জেলার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে অবস্থিত। এ ঈদগাহে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রসাশনিক ব্যক্তিবর্গ ঈদের নামাজ আদায় করেন। জাতীয় ঈদগাহ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কতৃক নির্ধারিত একটি ঈদের নামাজের স্থান। এখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন।
ইতিহাস: স্বাধীনতার আগে থেকেই হাইকোর্টের পাশের জায়গাটি ছিল ঝোপ-জঙ্গলে পূর্ণ। সেই জায়গার মাঝে ছিল একটি পুকুর। ১৯৮১-৮২ সালের দিকে সেই ঝোপ-জঙ্গল কিছুটা পরিষ্কার করা হয়। তার পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি মাজার। জায়গাটি একটু পরিচিত হয়ে উঠলে সেখানে ছোট পরিসরে শামিয়ানা টানিয়ে ঈদের নামাজ পড়ানো শুরু হয়। এর পরে ১৯৮৫ সালের দিকে সেই পুকুরটি ভরাট করে ফেলে কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে ওই ঈদগাহকে জাতীয় ঈদগাহ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশ হাইকোর্টের অধীনে ঈদগাহটি পরিচালিত হলেও তার দেখভাল করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০০০ সালে দুই ঈদেই ঈদগাহ প্রস্তুতের দায়িত্ব পায় ঢাকা সিটি করপোরেশন।
চারদিকে লোহার প্রাচীর দেওয়া বিশাল মাঠটিতে রয়েছে একটি মূল ফটকসহ কয়েকটি ফটক। কিবলার দিকে রয়েছে একটি মেহরাব। মেহরাবটি মূলত পাঁচটি মিনারে তৈরি। জাতীয় ঈদগাহে একটি জামাতে অন্তত এক লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। সেখানে একই জামাতে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য থাকে ভিন্ন ব্যবস্থা। এখানে ২০ হাজার নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মাঠের আকৃতি:
ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠের আয়তন ২ লাখ ৭০ হাজার ২৭৭ বর্গফুটের বেশি। জাতীয় ঈদগাহ মূলত একটি প্রশস্ত ফাকা মাঠ। ঈদের পূর্বে এ মাঠকে সাজানো হয় নামাজের উপযোগী করার জন্য। সম্পূর্ণ মাঠ নামাজের উপযোগী করতে কয়েক হাজার শ্রমিক প্রয়োজন হয়। আনুমানিক বলতে গেলে, প্রতিবার ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণের জন্য ৪৩ হাজার বাঁশ ও প্রায় ৩শ’ মন রশির প্রয়োজন হয়।
দুই বছর হয়নি কোনো ঈদের জামাত:
বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের প্রকোপে ঈদের নামাজ জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে, গত ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরের এবং পরবর্তীতে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
এফএইচ/এমএএইচ/
সর্বশেষ - আইন-আদালত
- ১ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে শেয়ারট্রিপের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ
- ২ ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা আইনজীবী কল্যাণ সমিতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি
- ৩ বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস: পিএসসির দুই কর্মচারী কারাগারে
- ৪ দুই মামলায় অব্যাহতি পেলেন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির ১২৫ নেতাকর্মী
- ৫ ন্যায়বিচার, সমতা ও সাংবিধানিক শাসনের প্রহরী সুপ্রিম কোর্ট