রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার
২০০১ সালে রাজধানীর রমনা পার্কের বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ওই হামলায় ১০ জন নিহত হন। আহত হন আরও অনেকেই। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় নয় বছর আগে আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিচারিক কার্যক্রম।
বিস্ফোরক আইনের আলোচিত এ মামলা ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল -১৫ এ বিচারাধীন। চলতি বছরের ৩০ মার্চ এ মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন নির্ধারণ ছিল। তবে এদিন নিরাপত্তা জনিত কারণে কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে আনা হয়নি। এজন্য ১৫ মে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তেহসিন ইফতেখার। এদিন আত্মপক্ষের সমর্থন শেষ হলে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করবেন বিচারক। যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করবেন আদালত। মে মাসের মধ্যে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ হবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে- এমনটাই প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের।
আরও পড়ুন: ভাবলাম শর্টসার্কিট, দৌড়ে গিয়ে দেখি সামনে ১০টা লাশ পড়ে আছে
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় আগামী ১৫ মে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন রয়েছে। সেদিন আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হলে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করবেন আদালত। আশা করছি মে মাসের মধ্যে মামলাটিতে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হবে। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এই প্রত্যাশা করছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আশা করছি মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ ১৪০৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয়। পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওইদিন বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলাকালে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি ও ১০টা ১৫ মিনিটের পর অন্য বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নৃশংস ওই বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। এতে আহত হন আরও অনেকেই। এ ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে ওইদিনই রমনা থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি মামলা করে।
আরও পড়ুন: জঙ্গি নয়, দুষ্টু পোলাপান চিরকুট দিয়ে হুমকি দিয়েছে
মামলার বিবরণে বলা হয়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলাম বিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন।
২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর শীর্ষ হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন— মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। দণ্ডপ্রাপ্ত এ আট আসামিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আদালত। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: নাম পরিবর্তন করে ২১ বছর আত্মগোপনে হুজিবি’র মুফতি শফিক
বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় ৮৪ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন।
এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল।
এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে বিস্ফোরক আইনের এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান হরকাতুল জিহাদের এ শীর্ষ নেতা।
জেএ/কেএসআর/জিকেএস
সর্বশেষ - আইন-আদালত
- ১ ট্রাইব্যুনালে গুম-নির্যাতনের অভিযোগ দিলেন শিবিরের ৭ নেতাকর্মী
- ২ হাসিনার ২ উপদেষ্টা ও ১০ সাবেক মন্ত্রীর ট্রাইব্যুনালে হাজিরা কাল
- ৩ কারাগারে পাঠানোর আদেশ শুনে পালালো আসামি, পুলিশের ২ সদস্য বরখাস্ত
- ৪ খালেদা জিয়াসহ আটজনের মামলায় আরও সাতজনের সাক্ষ্য
- ৫ হত্যাচেষ্টা মামলায় দেশ টিভির এমডি আরিফ ২ দিনের রিমান্ডে