মানবতাবিরোধী অপরাধ
রেসকোর্সে আত্মসমর্পণকারী ২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল ১৪ মার্চ
মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণকারী টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মনিরুজ্জামান কোহিনূর ওরফে মো. মনিরুজ্জামানসহ (৭০) দুই আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য আগামী ১৪ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার অন্য আসামির নাম আলমগীর তালুকদার (৬৭)।
ওইদিন মামলার পরবর্তী শুনানির দিনও ঠিক করেছেন আদালত। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর রাজিয়া সুলতানা চমন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন ও রাজিয়া সুলতানা চমন।
আরও পড়ুন: রেসকোর্সে আত্মসমর্পণকারী কোহিনূরসহ ২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন
২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। দুই আসামির মধ্যে একজন (মনিরুজ্জামান কোহিনূর ওরফে মো. মনিরুজ্জামান) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মনিরুজ্জামান ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন। ওইদিন ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির কো-অর্ডিনেটর মো. সানাউল হক। এটি তদন্ত সংস্থার ৮৭তম প্রতিবেদন।
এ মামলায় আসামিরা হলেন, টাঙ্গাইল গোপালপুর উপজেলার বেড়াডাকুরী গ্রামের সবুর মাস্টারের ছেলে রাজাকার কমান্ডার কোহিনুর ওরফে মনিরুজ্জামান কোহিনুর (৭০) এবং একই উপজেলার চাতুটিয়ার ছবর আলীর ছেলে রাজাকার আলমগীর ওরফে শা. আ. ম আলমগীর তালুকদার (৬৭)। আলমগীরের রাজনৈতিক পরিচয়ে বলা হয়েছে তিনি জামায়াতের সমর্থক। এই দুই আসামি গত ৩ মার্চ থেকে গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কোহিনূর রাজাকার সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর কাদেরিয়া ও ভারতীয় তথা যৌথবাহিনীর অভিযানে টাঙ্গাইল জেলা হানাদারমুক্ত হয়। টাঙ্গাইল জেলা আলবদর কমান্ডার মনিরুজ্জামান কোহিনূর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পশ্চাৎপসারণ করে ঢাকায় আশ্রয় নেন। ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাক সেনাদের সঙ্গে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। শিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে তিনি জাপান যান। ২০০২ সালে একটি মহলের যোগসাজশে কৌশলে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে জানা যায় তিনি মুসলিম লীগের সমর্থক।
এই দুই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে-
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ জুন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম উদ্দিন মিয়া ওরফে মুসলিম মাস্টারকে রাজাকার কোহিনূর এবং তার সহযোগী রাজাকাররা নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে মরদেহ গুম করে।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাজাকার কোহিনূর অন্য রাজাকারসহ পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে মুসলিম মাস্টারের বাড়ি পুড়িয়ে দেন। একই দিন মুসলিম মাস্টারের শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে তার দুই মেয়েকে আর্মিদের হাতে তুলে দিতে বলেন। তাদের না পেয়ে ওই বাড়ি থেকে আবুল মনসুর মোহাম্মদ মাজহারুল হাসান তালুকদার নামে একজনকে তুলে নিয়ে যান। ১১ ডিসেম্বর তাকে কাদেরিয়া বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার কোহিনূর ও আলমগীর হানাদার বাহিনীর সহায়তায় শাহীন হাওলাদার, শহীদ দুদু ফকির, শহীদ আমজাত ফকিরদের তাদের বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করেন এবং মোছা. সমলা বেগমকে উরুতে গুলি করে জখম করেন। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে যাকে যেখানে পান গুলি করেন। মুক্তিযোদ্ধা মনে করে তারা ৪৫ নিরস্ত্র লোককে গুলি করে হত্যা করেন।
অন্য একদিন তারা মাহমুদপুর থেকে পানকাতা গ্রামের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৭ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেন এবং দুই হাজার ৫৩০টি বাড়ির মালামাল লুট করে অগ্নিসংযোগ করেন।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম