জিএম কাদেরের জাপা চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনে বাধা নেই
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান পদে থেকে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন মর্মে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আপিল আবেদনের ওপর ‘নট টুডে’ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। ফলে জিএম কাদেরের এ পদে থেকে দায়িত্ব পালনে আপাতত কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী শেখ মুহাম্মমদ সিরাজুল ইসলাম।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের চেম্বারজজ আদালত এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে ‘নট টুডে’ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা। জিএম কাদেরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মমদ সিরাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল
গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাপা চেয়ারম্যানের পদে থেকে জিএম কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন মর্মে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করা হয়। ওইদিন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জাপার বহিষ্কৃত নেতা এবং দলটির সাবেক এমপি জিয়াউর রহমান মৃধার পক্ষে অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা এ আপিল করেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না মর্মে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতের রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ওইদিনই তার আইনজীবী জানিয়েছিলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে জিএম কাদেরের কোনো আইনগত বাধা নেই।
নিম্ন আদারতের রায়ের বিরুদ্ধে জিএম কাদেরের রিভিশন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওইদিন হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজের একক বেঞ্চ এ স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন।
ওইদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মুহাম্মমদ সিরাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইনসান উদ্দিন শেখ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মামুনুর রশিদ।
আরও পড়ুন: দলীয় কার্যক্রমে জিএম কাদেরের নিষেধাজ্ঞা বহাল
দলের চেয়ারম্যানের পদে থেকে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা বাতিল চেয়ে জিএম কাদেরের আপিল গত ১৯ জানুয়ারি নামঞ্জুর করেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন জিএম কাদের। পরে ওই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। মামলার বাদী ও জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধাকে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত বছরের ৪ অক্টোবর জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা।
জিএম কাদের যেন জাপার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন সে বিষয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর (২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের গঠনতন্ত্রের আলোকে) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। পরে এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জিএম কাদেরের করা আবেদন ওই বছরের ১৬ নভেম্বর খারিজ করে দেন একই আদালত।
এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মিস আপিল করেন জিএম কাদের। জেলা জজ আবেদন শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। পরে শুনানির আদেশ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করলে ২৪ নভেম্বর জেলা জজ আদালত সেটিও খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করেন জিএম কাদের। পরে ২৯ নভেম্বর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩০ অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞার আদেশ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন>>রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একক প্রার্থী, বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা
এরপর জিয়াউল হক মৃধা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। গত ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বারজজ আদালত। একই সঙ্গে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় এটি আপিল বিভাগে শুনানি হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান। এরপর হাইকোর্টে একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জিএম কাদের।
এরপর গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুর শিকদার, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মো. আজিজকে বহিষ্কার করেন। মশিউর রহমান রাঙ্গাকেও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কার হন জিয়াউল হক মৃধাও।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম