ধানসিঁড়ি সীমানা থেকে কমিয়ে খনন করা হয়েছে কি না, তদন্তের নির্দেশ
ঝালকাঠির রাজাপুরে কবি জীবনানন্দ দাসের রূপসী বাংলা কবিতার ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদীর সীমানা কমিয়ে খনন করা হয়েছে কি না তা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত ধানসিঁড়ি নদীর প্রস্থ কমিয়ে ঝালকাঠির রাজাপুরে নদী খননের নির্দেশদাতাদের চিহ্নিত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ধানসিঁড়ি নদীর রাজাপুরের অংশে আর যাতে মাটি ভরাট ও বাঁধ নির্মাণ না করা হয় তা নিশ্চিত করতেও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সিএস ও আরএস জরিপ করে নদীর সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি নদী দখলকারীদের তালিকা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রুলও জারি করেছেন আদালত। রুলে ধানসিঁড়ি নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। অন্য রুলে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের নির্দেশ ও প্রকৃত সীমানা অনুসারে ধানসিঁড়ি নদী খননের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না-জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, ভূমি কর্মকর্তা ও রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি রোববার (৩০ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহযোগীতা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল এবং অ্যাডভোকেট নাছরিন সুলতানা। আর সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
এর আগে, ঝালকাঠির রাজাপুরে কবি জীবনানন্দ দাসের রূপসী বাংলা কবিতার ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদী খননে অনিয়মের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-্এর পক্ষে জনস্বার্থে গত ২৫ অক্টোবর এ রিট আবেদন করা হয়। রিটকারী আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাম চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট রিপন বারৈ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, চোখের সামনে ধানসিঁড়ি ভরাট দখল হলেও তাদের চোখ বন্ধ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা প্রশস্ত ধানসিঁড়ির প্রস্থ কমিয়ে খননের ব্যবস্থা করে অবৈধ দখলকারীদের সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের এ কার্যক্রম পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইন, সংবিধান এবং সরকারি নীতির পরিপন্থী।
এর আগে ঝালকাঠির রাজাপুরে কবি জীবনানন্দ দাসের রূপসী বাংলা কবিতার ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদী খননে অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা খননের নামে খালে রূপান্তর করা ধানসিঁড়ি নদীটির জীবনস্বত্ব ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। তারা বলেন, দুই যুগ আগেও ধানসিঁড়ি নদীটি ১২০ ফুট দৃশ্যমান ছিল। দুই পাড়ের জমি ভূমিদস্যুরা দখল করে বসতি স্থাপন করেছে। এখন নদীটির মাত্র ৫৫ ফুট দৃশ্যমান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পুনরায় খনন শুরু করে নদীর নিচ থেকে মাটি কেটে প্রবাহমান জায়গা ভরাট করারও অভিযোগ করেন বক্তারা। ধানসিঁড়ি নদীর সীমানা নির্ধারণ করার পর নতুন করে পুরো নদী খনন করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী জানায়, ২০১৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী ৬৪ জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী খাল খনন প্রকল্পের আওতায় ধানসিঁড়ি নদীটি দুই বছর মেয়াদে দুই কিস্তিতে সাড়ে ৮ কিলোমিটার পুনর্খননের জন্য প্রায় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়।
দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান নদীর মোহনা থেকে দেড় কিলোমিটার বাদ দিয়ে তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজ শুরু করে। সে সময় ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮০৬ দশমিক ৫ ঘনমিটার মাটি খনন করার কথা ছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সক্যাভেটর যন্ত্র দিয়ে পরে মাটি কেটে নদীর দুই পাড়ে রাখায় বৃষ্টিতে ধুয়ে পুনরায় নদী ভরাট হয়ে যায়। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজাপুরের বাগড়ি এলাকা থেকে নতুন করে নদীটি খনন শুরু করে।
এফএইচ/এমআরএম/এমএস/এমআইএইচএস