মানবতাবিরোধী অপরাধ
সাক্ষীর করোনা, ময়মনসিংহের ৫ জনের সাক্ষ্য পেছালো
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ৮ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।
জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনা করা প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
তিনি বলেন, এ মামলায় মোট পাঁচজন আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুজন পলাতক রয়েছেন।
গ্রেফতার তিন আসামি হলেন- ধোবাউড়া পশ্চিম বালিগাঁও গ্রামের মো. কিতাব আলী ফকির (৮৫), মো. জনাব আলী (৬৮) ও মো. আব্দুল কুদ্দুছ (৬২)।
২০১৯ সালের ১০ মার্চ ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওইদিন ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, ওই মামলার পাঁচ আসামিই ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধোবাউড়াতে আসামিরা অপরাধ সংঘটিত করেন, তখন এটি ছিল হালুয়াঘাট থানার অধীনে। পাঁচ আসামির প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতি করেন। আসামিদের মধ্যে দুজন পলাতক থাকায় তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৩০ মে ও ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা ধোবাউড়ার বালিগাঁও ও তারাইকান্দি গ্রামে অপরাধ সংঘটিত করে। ওই সময়ে তারা অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তর করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। আর এসব অপরাধে আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
২০১৭ সালের ৬ অগাস্ট তদন্ত শুরুর পর তা শেষ হয় ২০১০ সালের ৭ মার্চ। এসময় সাক্ষী হিসেবে ৪০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম।
তিনি বলেন, আসামিদের সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা রাজাকার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার ও পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তদন্তকালে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও দুজন এখনো গ্রেফতার হয়নি। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের স্বার্থেই তাদের নাম-ঠিকানা-পরিচিতি আমরা প্রকাশ করছি না।
অভিযোগ-১
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার বালিগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হাতেম আলী ওরফে গেন্দা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ১৯৭১ সালের ৩০ মে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে আসামিরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময় তারা হাতেম আলীকে আটক করে বাড়ির উঠানে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে। হাতেম আলীর দুই স্ত্রী তাকে রক্ষা করতে এলে আসামিরা তিনজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বাড়ির জিনিসপত্র লুট করে।
পরে তিনজনকেই ঘরে বন্দি করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আসামিরা চলে যায়। ভারতের শিববাড়ির মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এ খবর পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা হাতেম আলীকে উদ্ধার করে। পরে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। দেশত্যাগের এ খবর পেয়ে আসামিরা হাতেম আলীর বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
অভিযোগ-২
১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নিয়ে ধোবাউড়ার তারাইকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী, আশ্রয়দাতা শহীদ নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আকন্দসহ তার দুই স্ত্রীকে হত্যা ও নাতি বৌকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
এরপর আসামিরা একই গ্রামের মো. ইছহাক আলী, মো. জমসেদ আলী (গুনা), মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. আব্দুল হেকিম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রামের মো. সিরাজ আলী, মো. হাইদার আলী, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মীর কাশেম, মো. রমজান আলী ও অজ্ঞাত ২৮ জনসহ মোট ৪১ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতনের পর ৪৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতাকারী হিসেবে চিহ্নিত তারাইকান্দি গ্রামের মাহমুদ হোসেন আকন্দ ও মিয়া হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরের জিনিসপত্র লুট ও লুটের পর জ্বালিয়ে দেয়।
এফএইচ/আরএডি/জেআইএম