ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

প্রধান বিচারপতি খালেদার মুখপাত্র : শামসুদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৬:৪১ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, প্রধান বিচারপতি খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে বিএনপির এজেন্ডা চরিতার্থ করছেন। উনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। সোমবার বিকেলে রায় ও আদেশের কপি আপিল বিভাগে জমা দেয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেইটের বাইরে বটগাছতলায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা নিয়ে মন্তব্য করার পেছনে প্রধান বিচারপতির ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ কাজ করছেন বলেও মন্তব্য করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না এই কথা বহু আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। তাই উনি (প্রধান বিচারপতি) খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে বিএনপির এজেন্ডা চরিতার্থ করার জন্য এটা বলেছেন। উনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।”

রোববার দুপুরে এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ‘সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী’ আচরণের অভিযোগ আনার কথা বলেন সাংবাদিকদের। মানিক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি নিজে স্বীকার করেছেন তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। আমি আশা করছি দেশের এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় তিনি পদত্যাগ করবেন।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে শামসুদ্দিন চৌধুরী আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, সরকার বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করছে। এসব বলে তিনি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’

যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি বৈঠক করেছেন বলেও অভিযোগ তুলে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার (সাকা চৌধুরী) পরিবারের ইচ্ছা অনুয্য়ী বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।’ এরপর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, শামসুদ্দিন চৌধুরী আর গণমাধ্যমে কথা না বলে অনিষ্পন্ন সব রায়ের ফাইল ফেরত দেবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধান বিচারপতি।

অবসরে যাওয়ার আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন যে বেঞ্চে ছিলেন সেই বেঞ্চে তার পরবর্তী সিনিয়র বিচারপতির কাছে সোমবার নিজের লেখা রায় ও আদেশ পৌঁছে দেন তিনি।

বিচারপতি মো. ইমান আলী আমার লেখা ৬৫টি রায় ও আদেশ এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র গ্রহণ করেছেন। নথি জমা দেয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ পথেই বিচারপতি শামসুদ্দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘সরকার ও বিচারাঙ্গণ বিরোধী’ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনেন।

“উনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন সরকার নাকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে... এসব মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য, মানুষের কাছে এই সরকারের ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য। আমি মনে করি তার পদত্যাগ করা উচিৎ।”

গতবছর ১ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার পর এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।

আপিল বিভাগে থাকা অবস্থাতেই ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, রায় লেখা শেষ না করায় তার পেনশন আটকে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এসকে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখাকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’বললে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়। তার ওই বক্তব্যে সমর্থন দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায় এর মধ্য দিয়ে ‘অবৈধ’প্রমাণিত।

এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে চিঠি লিখে তার অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে বলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন। পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ওই চিঠির বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। প্রধান বিচারপতিকে তিনি লেখেন, “আমি ইতিপূর্বে আপনাকে জানিয়েছি যে, আপনার এরূপ আচরণ সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী ও একই সঙ্গে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।”

এর কয়েক ঘণ্টা পর সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রধান বিচারপতি আশা করেন যে সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মিডিয়াতে মামলার রায় ও আদেশ সংক্রান্ত কোনোরূপ বক্তব্য না দিয়ে তার নিকট যতোগুলো অনিষ্পত্তিকৃত রায়ের মামলার ফাইল রয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে অতিসত্বর ফেরত প্রদান করবেন, যাতে বিচারপ্রার্থীদের আর ভোগান্তি না হয়।”

দিনভর নাটকীয়তার পর রোববার সন্ধ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন বলেন, তার লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ‘রাজি হয়েছেন।’

এফএইচ/বিএ