ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

বৃদ্ধাকে মারধরের মামলায় আসামিদের জামিন অবিচারক সুলভ: হাইকোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে বাড়ির জায়গা লিখে নিয়ে মারধর করা হয় ষাটোর্ধ এক অসহায় বৃদ্ধাকে। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু গ্রেফতারের পরদিনই আসামিদের জামিন দিয়ে দেন ময়মনসিংহের আদালত। এই জামিন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

সর্বোচ্চ আদালত বলেন, জামিনের আদেশটি স্পষ্টতই অবিচারক সুলভ। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এই জামিন আদেশের যথার্থতা, যৌক্তিকতা এবং তা আইনসঙ্গত কি না যাচাইয়ের সঙ্গত কারণ রয়েছে।

এছাড়া ওই মামলার আসামিদের জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়ে জামিনের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন।

সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এমরান আহমেদ ভুঁইয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

শুনানির পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, এই মামলায় ৩০৭ ধারার অভিযোগ ও প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে। আসামিরা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করার মতো অপরাধও করেছে মর্মে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল। পুলিশ ফরোয়ার্ডিংয়ের বিবরণ মোতাবেক ওই আসামিদের এই পর্যায়ে জামিন দেওয়ার যৌক্তিকতা ছিল না। এমন জামিন প্রদানে শক্তিশালী আসামিদের দ্বারা দুর্বল ভিকটিমকে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করা, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তদন্তকে প্রভাবিত করার বাস্তব কারণ ছিল। জামিনের আদেশটি স্পষ্টতই অবিচারক সুলভ।

jagonews24

এসময় হাইকোর্ট আসামিদের জামিন আদেশ বাতিল করে আত্মসমর্পণ করার এবং জেলহাজতে প্রেরণের কেন আদেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৩৩৯ (১) ধারার বিধানমতে এ রুল জারি করা হয়।

আদেশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ময়মনসিংহের দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ এবং ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশের অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।

এর আগে ঈশ্বরগঞ্জে খাইরুন্নেছাকে (৬০) সরকারি ঘর দেওয়ার আশ্বাসে বাড়ির জায়গা লিখে নিয়ে তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বৃদ্ধার ভাতিজী শাহানা আক্তার। ওইদিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্যের ছেলে আল আমিন ওরফে কাইয়ুম ও নাতি মো. ফারুক মিয়াকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পরদিন ২০ জুলাই ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের জামিন দিয়ে দেন।

জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের প্রয়াত কিতাব আলীর স্ত্রী খাইরুন্নেছা তার ১০ শতক জমিতে একাই বসবাস করছিলেন। বৃদ্ধার বাড়ির পাশেই সোহাগী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়ার বাড়ি। প্রতারণা করে অন্তত দুই বছর আগে বৃদ্ধার পুরো জমিই লিখে নেন তিনি। বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেন সুরুজ। এরপর বৃদ্ধাকে জমির কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি দেওয়ার কথা বলেন। তখন সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় সুরুজকে সব কিছু দিয়ে দেন অসহায় এই বৃদ্ধা।

এরপর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে খাইরুন্নেছার বাড়ির দশ শতাংশ জায়গা লিখে নেন সুরুজ। পরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দলিলে জমির মূল্য লেখা হয় ৪ লাখ টাকা। প্রতারণার বিষয়টি খাইরুন্নেছা ও তার স্বজনরা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করেন এবং জায়গা দখল নিতে বাধা দেন।

এরপর ১৫ জুলাই সকালে সুরুজ মিয়া তার দলবল নিয়ে বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গায় গাছ লাগাতে আসেন। এসময় বৃদ্ধা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা গাছ লাগাতে বাধা দিলে তাদের লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন সুরুজ মিয়া। একপর্যায়ে বৃদ্ধা খাইরুন্নেছাকে মাটিতে ফেলে তার মাথার চুলের মুঠো ধরে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যান সুরুজ। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে তার ভাইয়ের পাঁচ মেয়েকেও মারধর করে ইউপি সদস্যের লোকজন।

বৃদ্ধা বলেন, আমি আমার জায়গা ছাড়িনি। আমার থাকার একমাত্র সম্বল এই বাড়ি। এখানেই আমার মরণ হবে। এই জায়গাটা নিয়ে সুরুজ মেম্বার প্রতারণা করেছে এবং আমাকে ও আমার ভাতিজিদের মারধর করেছে।

এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস