ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

সিরিজ বোমা হামলা: ১৭ বছরে আট জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২২

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের মানুষের স্মৃতিতে এক দুঃসহ দিন। যে দিনটিতে দেশের ৬৩ জেলায় চার শতাধিক স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। একমাত্র জেলা মুন্সিগঞ্জ ভয়াবহ এ সিরিজ বোমা হামলার ছোবল থেকে রক্ষা সেদিন পেয়েছিল। দেশব্যাপী চালানো ওই বোমা হামলায় দুজন নিহত ও ১০৪ জন আহত হয়েছিলেন।

দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ওই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে পৃথক ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় এক হাজার ২৩ জনকে। নৃশংস এ হামলার ঘটনায় গত ১৭ বছরে ১৪৩টি মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৬টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

৯৪টি মামলার বিচারকাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। যেখানে ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের ২৭ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এরমধ্যে দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও করা হয়েছে।

এসব মামলায় এখন পর্যন্ত খালাস পেয়েছেন ৩৪৯ জন আর জামিনে আছেন ১৩৩ জন। বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫৫টি মামলা। এসব মামলার আসামি সংখ্যা ৩৮৬ জন। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকায় বিচারাধীন পাঁচটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মামলার বিবরণ ও প্রতিবেদন:
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জঙ্গিদের বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল সারাদেশ। নজিরবিহীন এ হামলার ঘটনায় আজও শিউরে ওঠে দেশবাসী। দুঃসহ স্মৃতিতে ভাসে ভয়ঙ্কর এক দিনের রক্তাক্ত ছবি।

১৭ বছর আগে আজকের এই দিনে বেলা সাড়ে ১১টায় দেশের ৬৩ জেলার ৪৩৪ স্থানে পরিকল্পিতভাবে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা দেশ। হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হন। এসব হামলায় সব মামলার তদন্ত শেষে বিগত ১৭ বছরে পুলিশ সবকটি মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে।

মামলাগুলোর মধ্যে ডিএমপিতে করা হয় ১৮টি মামলা, সিএমপিতে আটটি, আরএমপিতে চারটি, কেএমপিতে তিনটি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে সাতটি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে সাতটি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে আটটি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ছয়টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে রয়েছে তিনটি।

পুলিশ জানায়, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৬টি মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ৩২২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। যেখানে ১৫ জনকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। খালাস পেয়েছেন ৩৫৮ জন আর জামিনে রয়েছেন ১৩৩ জন।

ইতিহাস বলছে, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে (২০০১-২০০৬) সারাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জঙ্গিরা। অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলতে পরিকল্পনা করতে থাকে তারা। শুরু হয় জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলা। ২০০৫ সালেই কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হন। আহত হন চার শতাধিক মানুষ।

ওই বছরের ৩ অক্টোবর জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায় চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আদালতে। হামলায় তিনজন নিহত হন। বিচারকসহ আহত হন কমপক্ষে ৫০ জন। সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলায় গাড়িচালকসহ তিনি আহত হন। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারকের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হলে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে ও সোহেল আহম্মদ। আহত হন আরও অনেকে।

একই বছরের ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরিতে বোমা হামলা চালানো হয়। ১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। আহত হন কমপক্ষে ৪০ জন। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর দুই নেতাসহ আটজন নিহত হন। আহত হন শতাধিক লোক।

এসব মামলায় বিচারকার্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঞ্চল্যকর এসব মামলার বিচারিক কাজ চাইলেই শেষ করা যায় না। তবে শিগগির বিচারকাজ শেষ করার মধ্য দিয়ে দেশ-জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে বলে আশা তাদের।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস