ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

রাব্বীকে নির্যাতন : মামলা গ্রহণের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ১০:৩৫ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ (এফআইআর) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কয়েকটি রুল জারি করেন তারা। মামলা নেয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) প্রতি আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

শুনানির শুরুতে মাহবুবউদ্দিন খোকন নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে রাব্বীর অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের আবেদন জানান। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আমাদের কাছে কোনো নথি আসেনি। মঙ্গলবার আদেশের জন্য রাখেন। আমরা ওই এসআইয়ের বিষয়ে সব তথ্য সংগ্রহ করে মঙ্গলবার উপস্থাপন করবো। রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা দেখা দরকার।

এ সময় আদালত বলেন, আপনি পত্রিকা দেখেননি? পত্রপত্রিকায় সব এসেছে। তখন অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জবাবে আদালত বলেন, তাকে প্রত্যাহার কেন একেবারে শেষ করে দেয়া (স্থায়ী চাকরিচ্যুতি) উচিত।
এরপর আদালত ঘটনার তারিখ জানতে চান। তখন মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ৯ জানুয়ারি ঘটনা ঘটেছে।

এসময় আদালত বলেন, আজকে নয়দিন হয়ে গেছে। এখনো কোনো এফআইআর হয়নি। আমরা এফআইআর গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছি।     

আদেশের পরে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আদালত ওই পুলিশকে অপরাধী বলেছেন এবং তার বিরুদ্ধে রাব্বীর ১১ জানুয়ারি দেয়া অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও রুলও জারি করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে।  

এর আগে রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন ঘটনার দিন রাব্বীকে উদ্ধারকারী তার বন্ধু সাংবাদিক জাহিদ হাসান ও দুই আইনজীবীসহ তিনজন।

রিট আবেদনের মাধ্যমে গোলাম রাব্বীকে নির্যাতন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রাব্বীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেওয়া এবং এসআই মাসুদ সিকদারকে কেন গ্রেফতার করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।

একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা জজের নিচে নয় এমন সমমানের একজন বিচারককে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে তাও জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।

এছাড়াও রাব্বীকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।

রিট আবেদনের বাদী হচ্ছেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান, আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু ও মো. জাহিদ হোসেন।

রিটে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ সিকদার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে।

গত ৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বীকে আটক করেন মোহাম্মদপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বানানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন তারা। এরপর রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়ান এবং মারধর করেন। এমনকি তাকে বেড়িবাঁধে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়।

পরদিন সকালে এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রাব্বী। তবে নির্যাতনের ঘটনার সাতদিন পার হলেও সেটি এখনও মামলা হিসেবে রুজু করেনি থানা।

ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বীকে এসআই মাসুদের নির্যাতন এবং যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিদর্শককে ওই থানা পুলিশের মারধরের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর।

গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণীত হওয়ায় এসআই মাসুদকে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এর আগে ১১ জানুয়ারি সকালে তাকে মোহাম্মদপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জাগো নিউজকে জানান, রাব্বীর ঘটনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। ওপরের অনুমতি পেলে রাব্বীর দেওয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হবে।

এফএইচ/একে/পিআর

আরও পড়ুন