সাফারি পার্কে প্রাণীর মৃত্যু: প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ
গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে অসুস্থ হয়ে ২ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১টি জেব্রা ও একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা যাওয়ার ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক, সহকারী বন সংরক্ষক, ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মাহমুদ হোসেন তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জেব্রা ও বাঘসহ ১২টি প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আতাউল্লাহ নুরুল কবীর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফারহানা আফরোজ।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউল্লাহ নুরুল কবীর। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আজ এই আদেশ দেন আদালত।
আইনজীবী বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এক ডজনেরও বেশি বন্যপ্রাণীর মৃত্যুতে চলমান তদন্তের প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য তদন্ত কমিটিকে অবিলম্বে তদন্তকাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা, একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যুতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
সেই সঙ্গে সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা, একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যুতে চলমান তদন্ত দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আইনজীবী আতাউল্লাহ নুরুল কবীর আরও বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হারুন-অর রশিদ। তখন পর্যন্ত ১১টি জেব্রা ও একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যুর খবর ছিল। যে কারণে রিটে ১২টি বন্য প্রাণী মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পরে একটি সিংহী মৃত্যুর বিষয়টিও আশা করি এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত ২ জানুয়ারি ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি এবং ২৯ জানুয়ারি আরো দুটি জেব্রা মারা যায়। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে একটি বাঘ ও একটি সিংহীরও মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জেব্রার মৃত্যুর কারণ উদঘাটন ও করণীয় নির্ধারণ করতে বলা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে তদন্তকাজ শেষ না হওয়ায় এই মেয়াদ আরো ১০ কর্মদিবস বাড়ানো হয়। এ ছাড়া তদন্ত কমিটিতে আরো তিন সদস্যকে যুক্ত করা হয়।
সাফারি পার্কের ১৩টি প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। পার্কে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সীমানাপ্রাচীরের ভেতর থেকে খাবার পাচার, জেব্রা ও বাঘ মৃত্যুর ঘটনাটি গোপন রাখা এবং জেব্রাগুলোকে হত্যার অভিযোগ ওঠায় গত ৩১ জানুয়ারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান ও চিকিৎসক ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইনের পার্কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।
পরে ২ ফেব্রুয়ারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবিরকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়। সব শেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি বন্যপ্রাণী তত্ত্বাবধায়ক সারোয়ার হোসেনকে সরানো হয়।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস