কক্সবাজারে দলবদ্ধ ‘ধর্ষণ’: বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট
দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ‘স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ অথবা মুখ্য বিচারিক হাকিমের নেতৃত্বে এ ধর্ষণকাণ্ডের বিচারিক অনুসন্ধান করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।
এছাড়া ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল এই রিট আবেদন করেন।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, র্যাবের প্রধিান নির্বাহী কর্মকর্তা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সাতজনকে বিবাদি করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে এ ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছ থেকে এ বিষয়ে সাড়া না পাওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তার ভিন্ন বক্তব্য আসছে। সেটিও খুঁজে বের করা দরকার।
রিটের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে। তবে বিভিন্ন সংস্থা ঘটনা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে গরমিল আছে। তাই প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধান চেয়ে রিটটি করা হয়। চলতি সপ্তাহে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, ওই ঘটনা কক্সবাজারের দায়রা জজ বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিচারিক অনুসন্ধান করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।
রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর গত ২৭ ডিসেম্বর রিট আবেদনকারীর করা আবেদন যুক্ত করা হয়েছে। আবেদনে ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে সংঘটিত দলবদ্ধ ওই ধর্ষণের ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।
রিটে দেখা যায়, রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় ওই আবেদনের (২৭ ডিসেম্বর) ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে ও প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটের বিষয়ে তিনি বলেন, আজ রিটটি শুনানির জন্যে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে শুনানির জন্য আবেদনটি কার্যতালিকায় উঠতে পারে। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে প্রধান আসামি আশিকের নেতৃত্বে ২৫ বছর বয়সী এক পর্যটককে তুলে নিয়ে তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে তিনজন প্রথমে ঝুপড়ি চায়ের দোকানে তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর তার স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করা হয়। চায়ের দোকান থেকে তাকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে হোটেলে নিয়ে যান আশিক।
এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী গত ২৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তার স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আশিকসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। তাতে চারজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও তিনজনকে।
মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিক, এজাহারভুক্ত অন্য দুই আসামি ও সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় মামলার ২ নম্বর আসামি ইসরাফিল হুদা জয়কে। সে বাহারছড়া এলাকার মো. শফিউদ্দিন শফির ছেলে।
এফএইচ/ইএ/জেআইএম