ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

খালাস পেলেন তুষার দাস, জয় হলো ভালোবাসার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

ভালোবাসার টানে ব্রাহ্মণ বাবা-মায়ের ঘর ছেড়ে হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে তুষারকে বিয়ে করেছিলেন সুষ্মিতা দেবনাথ অদিতি। আর এটাই ছিলো তাদের ‘অপরাধ’। শেষপর্যন্ত হিন্দুত্বের সেই সাম্প্রদায়িক প্রথা ভেঙে জয় হলো ভালোবাসার।

বিচারিক আদালতে ১৪ বছর কারাদণ্ড পাওয়া শরীয়তপুরের তুষার দাস ওরফে রাজকে খালাস করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

খালাস চেয়ে করা আপিল শুনানি শেষে রোববার (১২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।

বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন তাদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে ব্রাহ্মণ মেয়ে সুষ্মিতাকে ভালোবেসে বিয়ে করার পর নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ (নিজের স্ত্রীকে) এনে তুষারের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার শাশুড়ি। ওই মামলায় তার ১৪ বছরের সাজা হয়। এরপর হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হন তুষার।

এ বিষয়ে ২০১৯ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীয়তপুরের সুষ্মিতা ও তুষার ভালবেসে বিয়ে করেন প্রায় দুই বছর আগে। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু এখনও তাদের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সুষ্মিতার বাবা-মা। মেয়ে ‘নাবালিকা’ এমন অভিযোগে সুষ্মিতার মা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন তুষারের নামে। ওই মামলায় আট মাসের মতো জেলও খাটেন তুষার। বিচার শেষে এ মামলায় তুষারকে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

অপহরণের বিষয়ে সে সময় রায়ে বলা হয়, আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভিকটিম সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিয়ে বিয়ে করেন। আসামি শিশু সুষ্মিতাকে বিয়ে করবেন- এ আশ্বাস দিয়ে অপহরণ করেছেন, যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

ধর্ষণের বিষয়ে তখন বিচারক বলেছিলেন, আসামি তুষার ভিকটিমকে ধর্ষণ করেছে মর্মে চাক্ষুষ সাক্ষী নেই। ভিকটিমের সঙ্গে আসামির দৈহিক মেলামেশা হয়েছিল কি-না এ মর্মে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে তিনি তার জবানবন্দির শেষের দিকে বলেন, সুস্মিতা স্বেচ্ছায় আসামিকে বিয়ে করেছেন ও বিয়ের পর তার সঙ্গে ১১ দিন ঘর-সংসার করেছেন। উভয়পক্ষের স্বীকৃতমতে গত ৩ মে সুস্মিতা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। এ সন্তানের জন্মতারিখ পর্যালোচনা করে ধরে নেওয়া যায়, জন্মের কমপক্ষে ১০ মাস ১০ দিন আগে সে তার মায়ের গর্ভে এসেছিল। ফলে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে তখন তুষারকে খালাস দেওয়া হয়েছিল।

ওই রায়ের পর গত ২৩ জুলাই তুষারকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি আপিল করেন। তার আপিল শুনানি করে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট তুষারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর ৭ আগস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তুষার।

তুষারের জামিনের পর তার স্ত্রী সুষ্মিতা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালত আমাকে ন্যায়বিচার দিয়েছে। জামিন আদেশে ছোট্ট মেয়েটা ওর বাবাকে কাছে পাবে। আমি ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তুষারকে বিয়ে করেছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনা না করে সবাইকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

সে সময় সুষ্মিতা তার পরিবারের উদ্দেশে বলেন, আমার বাবাকে বলতে চাই-তোমরা ভালো ও সুখে থেকো। যদি পারো আমার কাছে এসো, এসে সবকিছু মেনে নাও। কারণ, ভালোবাসায় কোনো উঁচু-নিচু বর্ণ নেই।

এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস