শুল্কফাঁকির মামলায় সাজা বহাল, তবে জেলে যেতে হবে না এমপি হারুনকে

শুল্কফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদ। আপিলটি খারিজ করে দিয়ে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে সাজার মেয়াদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে তাকে আর জেলে যেতে হবে না।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিমের একক বেঞ্চ এমপি হারুনের আপিল আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন।

এ মামলায় তিন আসামি যে ১৬ মাস করে কারাভোগ করেছেন তাকেই সাজার মেয়াদ হিসেবে গণ্য করেছেন হাইকোর্ট। ফলে সাজা বহাল থাকলেও এমপি হারুনকে নতুন করে কারাভোগ করতে হবে না।

এদিন আদালতে এমপি হারুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান ও এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আসামিদের করা মূল আপিল খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। ফলে তার সাজা বহাল। কিন্তু কোর্টের ‘পাওয়ার’ এবং ‘অনুকম্পায়’ সাজার মেয়াদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন তার আর জেলে যেতে হবে না। এরই মধ্যে আসামি যতটুকু কারাভোগ করেছেন, তার বাইরে তার আর কোনো সাজা ভোগ করতে হবে না।

দুদকের এই আইনজীবী আরও বলেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে এমপি মো. হারুনুর রশীদের করা মূল আপিল হাইকোর্টে খারিজ হওয়ায় আইন অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।

২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় এমপি হারুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে ওই রায়ে তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।

বিচারিক আদালতের ওই রায়ে এমপি হারুন ছাড়াও চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসামি এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে (এমডি, চ্যানেল ৯) ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং আরেক আসামি ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৪০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।

বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদ। পরে উচ্চ আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং আসামিদের জামিন আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, হারুন চার দলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালে ব্রিটেন থেকে একটি হ্যামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে কেনেন। গাড়িটি তিনি পরে আরেক আসামি ইশতিয়াক সাদেকের কাছে ৯৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর সাদেক গাড়িটি চ্যানেল নাইনের এমডি বাপ্পীর কাছে বিক্রি করেন।

নিয়ম অনুযায়ী শুল্কমুক্ত গাড়ি তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করলে শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু আসামি হারুন শুল্ক না দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করেন। এ অভিযোগে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক ইউনুছ আলী এমপি হারুনসহ তিনজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। ওই বছরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

মো. হারুনুর রশীদ সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এফএইচ/এমকেআর/এমএইচআর