ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

‘আমাদের তো মাঝে মাঝে ঘুম হয় না’ অর্থপাচারের শুনানিতে হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৫৫ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

দেশের অর্থপাচার বন্ধে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা কেউ চাই না এতো রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে দুর্নীতি হোক। যেভাবে অর্থপাচার হচ্ছে, আমাদের তো মাঝে মাঝে ঘুম হয় না। আমরা কেউ বসে থাকতে পারি না। কাউকে না কাউকে কাজ করতে হবে।

অর্থপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪ প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির নামে দাখিল করা দুদকের প্রতিবেদনের ওপর শুনানিতে সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নিজ পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেন।

এর আগে গতকাল রোববার (৫ ডিসেম্বর) একই বেঞ্চে অর্থপাচারে জড়িত ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশের এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম বহুল আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে এসেছিল।

আজ ওই প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক। এসময় রিটের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস।

এসময় আদালত অর্থপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্যারাডাইস ও পানামা পেপার্সে নাম আসা ৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা নিয়ে দুদকের উদ্দেশে বলেন, দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। বসে থাকার কোনো সুযোগ নাই।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার দুদককে উদ্দেশ করে বলেন, পানামা পেপার্সে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কী করা হয়েছে, সেটা আমরা দেখতে চাই। পানামা পেপার্সে যে নামগুলো আসলো সেটা কী হলো। আপনারা না পারলে বলে দেন।

তখন বিচারক বলেন, আমরা কিন্তু হাত গোটায়ে বসে থাকতে পারি না। আমাদের কিছু একটা করতে হবে। দেশে অনেক ধরনের সংগঠন আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো সংগঠন নেই যেটা ভারতে আছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হোক এটা আমরা চাই না; আমরা কেন? কেউই চায় না।

এসময় লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ভুখণ্ডের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশটা বির্নিমাণ করতে হবে। রক্তের বিনিময়ে গড়া দেশটা। আমাদেরকেও কিছু একটা করতে হবে। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। দেশের প্রয়োজনে এটা করতে হবে। দেশ যেটা চাইবে, সেটাই হবে। বসে থাকার সময় নাই। কাজ করতে হবে।

এর আগে রোববার হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বলে জানান দুদকের আইনজীবী। যার মধ্যে প্যারাডাইস পেপার্সে ২৯ আর পানামা পেপার্সে ১৪ জনের নাম রয়েছে। এ প্রতিবেদন দাখিলের পর রোববার আংশিক শুনানির পর আজ আবার শুনানি হয়।

পরে আদালত পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দেন। বিষয়টি আগামী ৯ জানুয়ারি সিআইডি ও বিএফআইইউকে জানাতে বলা হয়েছে।

গতকাল প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক জানিয়েছিল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) ওয়েবসাইটে দেশভিত্তিক তালিকা পর্যালোচনা করে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।

পানামা পেপারস বিষয়ে ১৪ নাম
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়া, আইন অমান্য করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার ও অবৈধ আয়ের টাকায় ক্ষমতার মালিক হওয়া প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পানামা পেপারস শিরোনামে বিশ্বজুড়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তালিকায় ১৪ জনের মধ্যে রয়েছেন- বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, সেতু করপোরেশনের পরিচালক উম্মে রুবানা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিডব্লিউএন (এ) আজমত মঈন, বনানীর সালমা হক, এস এম জোবায়দুল হক, বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার সৈয়দ সিরাজুল হক, ধানমন্ডির দিলীপ কুমার মোদি ও শরীফ জহির, গুলশানের তারিক ইকরামুল হক, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, পরিচালক খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, পরিচালক আহমেদ ইসলাইল হোসেন ও পরিচালক আখতার মাহমুদ।

প্যারাডাইস পেপারসে ২৯ নাম
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম তুলে ধরে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারাডাইস পেপারস নামে অর্থপাচার সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদের প্রথম পর্বে ১০ জন এবং দ্বিতীয় পর্বে ১৯ জনের নাম পাওয়া যায়।

প্রথম পর্বের ১০ জন হলেন- মাল্টিমোড লিমিটেডের আবদুল আউয়াল মিন্টু, নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল, তাজওয়ার মো. আউয়াল, নিউইয়র্কের তাইরন পিআইএর মোগল ফরিদা ওয়াই, যুক্তরাষ্ট্রের শহিদ উল্লাহ, বনানীর চৌধুরী ফয়সাল, বারিধারার আহমাদ সামির ও মহাখালীর ব্রোমার অ্যান্ড পার্টনারস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড।

দ্বিতীয় পর্বের ১৯ জন হলেন- ভেনাস ওভারসিস কোম্পানির মুসা বিন শমসের, বারিধারার ডাইনামিক এনার্জির ফজলে এলাহী, ইন্ট্রিপিড গ্রুপের কে এইচ আসাদুল ইসলাম, খালেদা শিপিং কোম্পানির জুলফিকার আহমেদ, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের তাজুল ইসলাম তাজুল, বেঙ্গল শিপিং লাইনসের মোহাম্মদ মালেক, সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানির শাহনাজ হুদা রাজ্জাক, ওসান আইস শিপিং কোম্পানির ইমরান রহমান, শামস শিপিং লিমিটেডের মোহাম্মদ এ আউয়াল, উত্তরার এরিক জনসন অ্যান্দ্রেস উইলসন, ইন্ট্রিডিপ গ্রুপের ফারহান ইয়াকুবুর রহমান, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের তাজুল ইসলাম, পদ্মা টেক্সটাইলের আমানুল্লাহ চাগলা, নিউটেকনোলজি ইনভেস্টমেন্টের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, মাল্টার মোহাম্মদ রেজাউল হক, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ কামাল ভূঁইয়া, তুহিন-সুমন, সেলকন শিপিং কোম্পানির মাহতাবা রহমান, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ফারুক পালওয়ান ও গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেমের মাহমুদ হোসাইন।

এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম