ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

রাজারবাগ পীরসহ ৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০২১

রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমানসহ চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চন। অন্য তিনজন হলেন শাকিরুল কবির, ফারুকুর রহমান ও মফিজুল ইসলাম।

বুধবার (১ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদনটি করেন ৪৯টি গায়েবি মামলার শিকার কাঞ্চনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির।

রিটকারী একরামুল আহসান কাঞ্চনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি রাজারবাগ পীর যে কোনো সময়ে দেশ ছেড়ে যেতে পারেন, তাই আমরা আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার জন্যে, রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমানসহ মামলার সিন্ডিকেটের তিন সদস্যকে বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়েছে। দিল্লুর ছাড়া অন্যরা হলেন শাকিরুল কবির, ফারুকুর রহমান ও মফিজুল ইসলাম।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজারবাগ পীর সিন্ডিকেটের করা ৪৯ মামলার বাদী খুঁজতে ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের করা রিটে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ চারজনকে বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত সব রিটের শুনানির জন্য আগামী ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

পীর ছাড়া অন্য তিনজন হলেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গোলম কবিরের ছেলে সাকেরুল কবির, একই জেলার সুধারামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ফারুকুর রহমান এবং কুমিল্লার হোমনার লিয়াকত হোসেন প্রধানের ছেলে মফিজুল ইসলাম। ফলে ওই রিটে এখন বিবাদী হলেন ৪৪ জন।

ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের দায়ের করা রিটে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ চারজনকে সংযুক্ত করতে একটি সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে ওইদিন রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এমাদুল হক বশির ও মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও অ্যাডভোকেট ওজিউল্লাহ্। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আইনজীবী এমাদুল হক বশির বলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় তিনি এক হাজার ৪৬৫ দিন জেল খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদী খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলায় খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।

হাইকোর্ট গত ১৪ জুন এক আদেশে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় করা ৪৯টি মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই ৪৯ মামলার বিস্তারিত নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এরপর সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করে।

সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরিফের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করে আসছে।

এমাদুল হক বশির বলেন, এ আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। চারজনকে বিবাদীর তালিকায় যুক্ত করার কারণ জানতে চাইলে আইনজীবী জানান, এরা সবাই পীরকে মামলায় সহযোগিতা করেছেন। গত ৩১ আগস্ট দেওয়া সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

গত ৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ আদেশের জন্য ধার্য করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর এ আদেশ দেন আদালত। এরপর ১৫ নভেম্বর আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। সেটি নিয়ে করা রিট সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) থাকবে বলেও জানান আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি তালিকায় ওঠে।

গত ২৮ অক্টোবর এ রিভিউ শুনানি থেকে সরে যান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ১৯ অক্টোবর ৪৯ মামলার বাদীদের খুঁজতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার আদালত।

এ বিষয়ে গত ২৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও সেদিন শুনানি না হওয়ার ধারাবাহিকতায় ২৮ অক্টোবরের কার্যতালিকায় ওঠে। অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির জানান, গত ৭ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে তার আইনজীবী এ রিভিউ আবেদন করেন।

এর আগে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের মুরিদদের নাম উঠে আসে।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের ওপর এখনো শুনানি হয়নি।

এরপর রিটকারী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে চলমান সব মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিআইডিকে দেওয়া তদন্তাদেশসহ হাইকোর্টের পুরো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে সিআইডির প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করতে গেলে আদালত শুনানি না করে সেটি কার্যতালিকা থেকে বাদ (ডিলিট) দিয়ে আদেশ দেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সিআইডিকে তদন্ত করতে দেওয়ার আদেশসহ হাইকোর্টের সেই পুরো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি স্থগিত করেন। রিট আবেদনকারী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে চলমান সব মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশটি স্থগিত করা হয়। পরে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা আপিল বিভাগের আদেশের সার্টিফায়েড কপি হাইকোর্টে দাখিল করেন।

আপিল বিভাগের আদেশ দেখে তখন হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, যেহেতু আবেদনকারীর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের ওপর আপিল বিভাগ থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, ফলে এ মুহূর্তে রিট মামলায় অন্য কোনো আদেশ দেওয়া সম্ভব নয়। এ মর্মে হাইকোর্ট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদেশ দেন।

রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনি কয়েক বছর কারাভোগ করেন। পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। কাঞ্চনের দাবি, তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা ভুয়া।

একরামুল হক কাঞ্চনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে দেশের ১৩ জেলায় ৪৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২০টি মামলায় এক হাজার ৪৬৫ দিন কারাভোগ করেন তিনি। ২০টি মামলার মধ্যে পাঁচ মামলার বাদী আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এর মধ্যে চারটি মামলা চলমান।

তবে একরামুলের বিরুদ্ধে আবুল বাশারের করা মামলাটি ২০১৫ সালে বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আপিল বিভাগে শুনানিতে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন কোনো পক্ষই দাখিল করেনি। আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়।

জামিনে বের হয়ে ওই সব মামলা ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে মামলা দায়েরে সম্পৃক্ত বা বাদীকে খুঁজে বের করতে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ জুন রিট করেন একরামুল। নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে অবস্থিত আনোয়ার ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ের মালিক একরামুল।

এফএইচ/বিএ/জিকেএস/ইএ