বাঘশাবকের মৃত্যু নিয়ে সাক্ষাৎকার, ঢাবি অধ্যাপককে লিগ্যাল নোটিশ
করোনাকালে গত ২৬ মে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেঙ্গল টাইগার দম্পতি টগর ও বেলির ঘরে জন্ম নেয় ছেলে শাবক দুর্জয় এবং মেয়ে শাবক অবন্তিকা। দুর্জয়-অবন্তিকার নাম রেখে জন্মনিবন্ধন করার অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করেই গত ১৬ আগস্ট পালিত হয়।
দুই শাবকের নাম রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। কিন্তু জন্মের প্রায় ছয় মাস পর মাছির কারণে দুর্জয় ও অবন্তিকা মারা গেছে।
মারা যাওয়ার ঘটনায় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বক্তব্য দেওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনারারি প্রফেসর নূর জাহান সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় বাঘশাবকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যে ধরনের সম্মানহানিকর, অশালীন বিদ্বেষপ্রসূত, কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছেন। তার জন্য দেশের সব ভেটেরিনারিয়ানরা অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ, মনোক্ষুণ্ন ও মর্মাহত। তাই এসব বক্তব্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্যে ১৫ দিন সময় দেওয়া হলো।
ডাকযোগে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিভিএ) মহাসচিব ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন এ নোটিশ পাঠান।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, বিভিন্ন চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইউটিউব হতে আপনার বক্তব্য অপসারণ করার জন্য আপনাকে বলা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমার মক্কেল বাধ্য হবেন।
ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনারারি প্রফেসর নূর জাহান সরকারকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়, আমার মক্কেল বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিভিএ) মহাসচিব ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা, আদিষ্ট হইয়া নোটিশ গ্রহীতাকে জানাচ্ছি যে, গত ২৬ নভেম্বর, ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি বাঘশাবকের অসুস্থতাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের আলোচনায় আপনি নোটিশ গ্রহীতা চিড়িয়াখানায় কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের নিয়ে কটূক্তি করে বলেছেন যে, ‘আলতু-ফালতু গরু-ছাগলের ডাক্তার, তারা গরু-ছাগল নিয়ে থাকবে, তারা ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কি বুঝবে?’, যার ফলে বাংলাদেশের রেজিস্ট্রিকৃত ৭ হাজার ৪৮৯ জন ভেটেরিনারিয়ানের মতো আমার মক্কেল নোটিশদাতা একজন ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে তার ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও পেশাগত সম্মানহানি হয়েছে।
বাংলাদেশের সব ভেটেরিনারিয়ান দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরিনারি বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কর্তৃক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) কর্তৃক আইনসিদ্ধভাবে রেজিস্ট্রিকৃত হয়ে ভেটেরিনারি প্রাকটিশনার হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হন।
নোটিশে বলা হয়, আপনি গত ২৬ নভেম্বর চিড়িয়াখানায় বাঘশাবকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যে ধরনের সম্মানহানিকর, অশালীন বিদ্বেষপ্রসূত, কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছেন, তার জন্য বাংলাদেশের সব ভেটেরিনারিয়ানরা অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ, মনোক্ষুণ্ন ও মর্মাহত। আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাদেশের সমস্ত ভেটেরিনারিয়ানদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা আগামী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে বিভিন্ন চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইউটিউব হতে অপসারণ করার জন্য অবহিত করা হচ্ছে। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোটিশদাতা বাধ্য থাকবে।
জানা গেছে, গত ২১ নভেম্বর তাদের মৃত্যু হলেও বিষয়টি গোপন রাখে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরপরে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ জানান, ১৫ নভেম্বর দুই বাঘশাবকের অসুস্থতা ধরা পড়ে। তারা পেছনের পা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। এ অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করে চিড়িয়াখানা মেডিকেল বোর্ড। রক্ত পরীক্ষায় তাদের মাছিবাহিত রক্তের পরজীবী ধরা পড়ে। সে অনুযায়ী চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঘ শাবক দুটিকে বাঁচানো যায়নি।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেটসি ফ্লাই নামে এক ধরনের মাছির কামড়ে ট্রাইপেনোসোমা রোগে এদের মৃত্যু হয়। তবে এর খবর বা কোনো ছবি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এফএইচ/এএএইচ/এএসএম