ভিন্নমতে বিচারপতির এজলাস ত্যাগ, বেঞ্চ পুনর্গঠন
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক উপস্থিত রাখা নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) একজন বিচারপতি এজলাস ত্যাগ করলে দিনভর বিচারকাজ বন্ধ থাকে। ওই বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
রোববার (২১ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে ভার্চুয়াল দ্বৈত বেঞ্চ গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবাসাইটে রোববারের (২১ নভেম্বর) জন্য প্রকাশিত কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) দেখা যায় বেঞ্চটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এর আগে দুদকের একজন কর্মকর্তাকে কোর্টে সার্বক্ষণিক রাখার বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের ওই বেঞ্চে দুই বিচারপতি ভিন্নমত দিয়েছিলেন। এর ফলে ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি দিনের শুরুতে এজলাস ত্যাগ করলে দিনভর চলেনি ওই দিনের বিচারকাজ।
দুই বিচারপতির ভিন্ন ভিন্ন মতের কারণে যদিও দুপুরের পর প্রধান বিচারপতি ওই বেঞ্চ ভেঙে দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবাসাইটে দেখা যায়, রোববারের প্রকাশিত কার্যতালিকায় বেঞ্চটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এমন ঘটনা ঘটে।
এ সময় দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিএনপির সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার মামলায় দুদকের কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে অবহিত হয়ে দুদকের সমন্বয়ক আবদুস সালাম ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত হয়ে ওই দিনই জানান, এ মামলায় নতুন আইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ওই সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুদকের পক্ষ থেকে আইনজীবী না থাকার এবং কোনো কোনো সময় আদালতের আদেশ দুদকে যথাযথভাবে কমিউনিকেট না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
পরে সার্বক্ষণিক দুদকের একজন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে রাখতে মৌখিকভাবে বলা হয়। যদিও ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে দুদকের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতেন।
এদিকে পরের দিন বৃহস্পতিরবার (১৮ নভেম্বর) সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, বুধবার আদালত মৌখিকভাবে আদেশ দিয়েছিলেন। তবে এখন কমিশনে জনবলের সংকট আছে। সার্বক্ষণিক একজন লোক দিতে কিছুটা সময় লাগবে।
তখন বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, কখনো কখনো দুদকের আইনজীবী থাকেন না। আদালতের আদেশ যথাযথভাবে দুদকে কমিউনিকেটও হয় না।
এ সময় খুরশীদ আলম খান বলেন, কর্মকর্তা না দেওয়া পর্যন্ত দুদক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাকে জানানো হলে তিনি তা দুদককে অবহিত করবেন।
এক পর্যায়ে বেঞ্চের অপর বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান বলেন, দুদকের কি আর কাজ নেই? একজন অফিসার এখানে এসে বসে থাকবেন!
এ সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সেকেন্ড জজ এত কথা বললে সমস্যা। আদালতের ডেকোরাম আছে। এরপর কনিষ্ঠ বিচারপতির প্রতি অসন্তোষে এজলাস ছেড়ে চলে যান জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে (১০টা ৪৭ মিনিটে) এ ঘটনা ঘটে। এরপর ওই দুই বিচারপতি আর একসঙ্গে বেঞ্চে বসেননি।
পরে বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করার পর বেঞ্চটি পুনর্গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবাসাইটে প্রকাশিত কার্যতালিকায় দেখা যায়, পুনর্গঠিত এই বেঞ্চে বিচারপতি এম এস মজিবুর রহমানের পরিবর্তে বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক যুক্ত হয়েছেন।
অপরদিকে বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে বিচারপতি এম এস মজিবুর রহমান যুক্ত হয়েছেন।
এর আগে সরকারি জমি আত্মসাতের ঘটনায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুকের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ওই রুল জারি কারেন আদালত। একই সঙ্গে তিন মাসের জন্য মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানির জন্যে মামলাটি কার্যতালিকায় ছিল।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার ইয়ারপুর মৌজার ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ সরকারি খাসজমি থেকে ভুয়া দানপত্র দলিলের মাধ্যমে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ সম্পত্তি আত্মসাৎ করার ঘটনার প্রমাণ পায়। এ ঘটনায় জেলা দুর্নীতি দমন ব্যুরোর পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ মে কানিজ ফাতেমাসহ আটজনকে আসামি করে সেনবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয় ১৯৯৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের উপ-পরিচালক নিরাপদ স্বর্ণকার ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি সবার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ১৯ মার্চ বিশেষ দায়রা জজ আদালত, নোয়াখালী সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় জামিনে আছেন কানিজ ফাতেমা।
এফএইচ/ইএ/এমএস