মেয়েদের সঙ্গে ঘুরতে চেয়ে জাপানি মায়ের আবেদনের আদেশ বুধবার
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণে বাসার সিসিটিভি সরানো, বিভিন্ন অনলাইনে থাকা অবমাননাকর ভিডিও অপসারণে বিটিআরসির প্রতি নির্দেশনা, দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল ও রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি চেয়ে করা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর আবেদন শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্যে আগামীকাল (৮ সেপ্টেম্বর) বুধবার দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই দিন ধার্য করে আদেশ দেন। আদালতে আজ জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ।
এর আগে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় শিশুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, রাতে থাকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করেন জাপানি মায়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
আবেদনের বিষয়ে শিশির মনির জাগো নিউজকে জানান, এরিকো দুই মেয়ের সঙ্গে রাতে থাকা, বাইরে বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণ, তাদের বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণের জন্য ইমরান শরীফ কর্তৃক বাসায় স্থাপন করা সিসিটিভি অপসারণ, বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে থাকা এরিকোর বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভিডিও অপসারণে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়।
এর আগে গত ২২ আগস্ট ওই দুই শিশুকে বাবার কাছ থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসময় তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। তার আগে ১৯ আগস্ট তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এরপর গত ২৩ আগস্ট জাপানি দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এসময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন মর্মে আদেশ দেন আদালত। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বাবা রাজধানীর যে কোনো একটি উন্নতমানের হোটেলে মেয়েদের রাখার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন।
এরপর গত ২৬ আগস্ট বাবা-মা একমত হওয়ায় জাপানি দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। তারপর থেকে শিশুরা গুলশানের একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যাশিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যাশিশুকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।
জাপানি মায়ের আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।
কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
এফএইচ/এআরএ/জিকেএস