ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

আর কোনো মিনু যেন প্রক্সিতে না পড়ে: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১

১৫ বছর আগে এক হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির হয়ে বদলি কারাভোগ করা মিনুর মুক্তির পর মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

শুনানিতে এ বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আর কোনো মিনু যেন এভাবে প্রক্সিতে না পড়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে দেশের কারাগারগুলোতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা দরকার।’

মিনুর মৃত্যু ঘটনায় করা মামলা এবং তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর মামলার নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) উপস্থিত হওয়ার পরে এ বিষয়ে শুনানিতে বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

এদিন আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আর আইনজীবীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান।

এ সময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কেন মিতু রাত ৩টায় বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গেলেন। তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনায় আটকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, অথবা শুধু আটকেরাই প্রক্সির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে জড়িত কিনা, নাকি অন্য কেউ আছে- এসব বিষয় সিরিয়াসলি তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইনস্ট্রাকশন নেবেন।’

শুনানিতে রুলের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘এখনও রুলের জবাব নেই। আপনি দৃষ্টি দেবেন?’ জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘মাই লর্ড, অবশ্যই দেবো। ’

আদালত বলেন, ‘এটা কি দেশের জন্য ভালো হবে?’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘হবে মাই লর্ড। সবাই তো দেশের মঙ্গল চাই।’

আদালত বলেন, ‘চান তো?’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আনডাউটেডলি মাই লর্ড।’ আদালত বলেন, ‘আর কত মিনু বেগম সৃষ্টি হচ্ছে, হবে।’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আছে মাইলর্ড। সেগুলো তো অপ্রকাশিত।’

আদালত বলেন, ‘এটার জন্য আমরা রুল দিয়েছি। এটা পিটিশনারের কোনো ইন্টারেস্ট না।’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘ইন্টারেস্ট হলো সিটিজেনের।’ আদালত বলেন, ‘হ্যাঁ, সিটিজেনস। আর কোনো মিনু যেন এভাবে প্রক্সিতে না পড়ে।’

সারওয়ার হেসেন বলেন, ‘মিনু কিছু খাদ্যসামগ্রী এবং টাকার লোভে পড়েছে। এখন মাই লর্ড কেউ যদি আত্মাহুতি দেয়, আপনি-আমরা সকলে এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো?’

আদালত বলেন, ‘এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই তো (কারাগারে) বায়োমেট্রিক।’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘জ্বি মাই লর্ড, এটা করলে ভালো হবে।’

আদালত বলেন, ‘বায়োমেট্রিক হলে শনাক্ত হয়ে যাবে। তখন এগুলো করতে পারবে না। কাজেই এ রুলের ব্যাপারে দৃষ্টি দেন।’

সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলবো। উনি শুনানি করতে পারেন।’

পরে আদালত রুল শুনানির জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন। ওইদিন এ ঘটনায় তলব করা চট্টগ্রামের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকতে হবে। এছাড়া দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামে এক হত্যা মামলায় আদালত ২০১৭ সালে ঘোষণা করা এক রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। তিনি সে সময় পলাতক ছিলেন। পরে আইনজীবী নাছির উদ্দীনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুন মাসে কুলসুম আত্মসমর্পণ করতে চান। আত্মসমর্পণের দিনই মিনুকে কুলসুম হিসেবে সাজিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে মিনু। ওইদিনই মূল আসামির বদলে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর কুলসুমের নামেই মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর উচ্চ আদালতে আবেদন করলে গত ৭ জুন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর পরিবর্তে জেল খাটা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ নাসের, আইনজীবী নুরুল আনোয়ার, আইনজীবী বিবেকানন্দ চৌধুরী, আইনজীবী পুষ্পেন্দ বিকাশ কানুনগো ও আইনজীবী সহকারী সৌরভ হোসেনকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। সে অনুসারে ২৮ জুন তারা হাজির হন। ওই পাঁচজনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন। এ দিন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির একটি রুল জারির আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে রুল দেন।

রুলে দেশের সব জেলখানায় কয়েদিদের পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দু’সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, গত ১৬ জুন বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু। ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৯ জুন একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে ২৯ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এরইমধ্যে তিনি জবানবন্দিও দিয়েছেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের মৃধা।

পরবর্তী তারিখে আদালত নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। নির্ধারিত দিন বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) তারা হাজির হন। শুনানিতে তলব করা আইনজীবীরাও যুক্ত ছিলেন।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস