‘ফেসবুকে একে অপরের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র’
বরগুনা সদরের এক স্কুল শিক্ষিকাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামির জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এ সময় আদালত বলেছেন, ফেসবুকের ভুয়া আইডি খুলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়া এটি সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র।
আদালত বলেন, ‘ফেসবুকে লিখে একজন মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় করা কি যেন তেন কথা!’ শুনানিতে ওই দম্পতির সন্তানের কথা তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনাকে জামিন শুধুমাত্র শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে।’
শুনানিতে এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রামীণ ব্যাংকের বরগুনার আমতলী শাখার কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমকে জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিয়মিত আদালত খোলা পর্যন্ত এই জামিন দেয়া হয়েছে। আদালত এই জামিন আদেশের সময় বলেন, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করলে সে ব্যক্তি মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা একটা জঘন্য কাজ। এ ধরনের কাজ সামাজিক অবক্ষয়ের উদাহরণ।’
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল একক বেঞ্চ তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদালতে আজ জামিন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিয়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
জামিনের শর্তে আসামিরা মুক্তি পেলে বাদীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পৃথক স্ট্যাটাস দেবেন আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ থাকবে যে, এর আগের স্ট্যাটাসটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর ওনাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই মিথ্যা স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিল। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এ রকম কোনো অপরাধ করবেন না।
এদিকে শুনানিতে আসামিপক্ষে আইনজীবী বলেন, ‘স্ট্যাটাস দেয়ার সঙ্গে জড়িত মামলার এক নম্বর আসামি ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। ভুল করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলেছে। তাই উচ্চ আদালতে জামিন চাচ্ছি।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘ফেসবুকে যেটা লিখেছেন সেটা একজন মানুষকে খুন করার চেয়ে বড় অপরাধ। একজন মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় করা কি যেনতেন কথা!’
আইনজীবী বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জামিন আবেদনকারীরা।’
এ সময় আদালত আরও বলেন, ‘আপনি এখন এসে বলছেন যে, মিথ্যা স্যাটাস দিয়েছেন। এখন ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইলে হবে? আপনিতো সারা দুনিয়ার মানুষের সামনে তাদের হেয় করলেন। আপনি যার সম্পর্কে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সন্তানের সামনে তারা মুখ দেখাবে কি করে? মানুষের সামনে কোনো একজন ব্যক্তিকে রাস্তায় লাথি মারলেন, এরপর গোপনে এসে তার পা ধরে মাফ চাইলে কি হবে? এ ঘটনাও তেমনি। আপনি মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে যেমন তাদের সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে হেয় করেছেন, তেমনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানাবেন যে, আপনি মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের আদেশে এই শর্ত উল্লেখ করার আবেদন জানান। আদালত তা দিতে রাজি না হয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, লিখিতভাবে আদেশে দিচ্ছি না। তবে আপনি পৃথক স্ট্যাটাস দেয়াটা নিশ্চিত করবেন। জবাবে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, মুক্তির পর ক্ষমা চেয়ে পৃথক স্ট্যাটাস দেব।
জানা যায়, মামলার বাদীর স্বামী ও আসামি আকতারুজ্জামান উভয়েই গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা। দুইজনেই বরগুনা সদরের রায়তা শাখায় কর্মরত ছিলেন। আসামি আখতারুজ্জামান সেখান থেকে বদলি হয়ে এখন আমতলী শাখায় দায়িত্বরত। মো. আকতারুজ্জামানের সহকর্মীর স্ত্রী (মামলার বাদী) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। উভয় পরিবারের বিরোধের জের ধরে মো. আকতারুজ্জামানের স্ত্রী তামান্না বেগম একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গত ১৩ মে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকা বাদী হয়ে আকতারুজ্জামান ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমকে আসামি করে গত ৪ জুন বরগুনা সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলার পর ওই দিনই পুলিশ আকতারুজ্জামান ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। সেই থেকে তারা কারাবন্দি। এ অবস্থায় ওই দম্পতি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।
এফএইচ/এআরএ/জেআইএম