টিকা-অক্সিজেন নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না : হাইকোর্ট
করোনাভাইরাসের টিকা ও হাসপাতালে অক্সিজেনের সরবরাহ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা না করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার।
এদিন হাইকোর্টে মহামারি করোনা মোকাবিলায় স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও করোনার টিকা কেনা এবং প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে টিকা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হয়।
শুনানিতে টিকা ও অক্সিজেন প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। উদ্যোগের কোনো অভাব নেই।’
এ সময় আদালত টিকা ও অক্সিজেন সরবরাহে সরকারের কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা আছে কি-না সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে খোঁজ নিতে বলে রিট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ করে দেন।
করোনা মোকাবিলায় স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও করোনা টিকা কেনার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৬ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার। রিটে একইসঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকদের টিকা দেয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়। এর আগে তারা সরকারকে নোটিশ দিয়েছিলেন।
এ রিটের শুনানিতে আদালত রিটকারীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘নোটিশ দিলেন ২৪ এপ্রিল। সাত দিনের নোটিশ দিয়ে এসে একটি রিট ফাইল করে বলছেন- যে একটি কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান করার জন্য? এটা যখন শুরু হলো ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনও (ডাব্লিুইএইচও) প্রেডিক্ট করতে পারেনি কি হবে, কি হতে পারে।’
‘এ রকম একটি সিচুয়েশনে আপনি একটা রিট পিটিশন নিয়ে আসলেন? ডাব্লিউএইচও সহ যারা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দেশে বিদেশে সমস্ত বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে নতুন নতুন কথা বলছেন। বিভিন্ন রকম ভ্যারিয়েন্ট চলে আসছে। এগুলো নিয়ে কি বলবেন?’
‘ভ্যাকসিন নিয়ে বলছেন প্রাপ্তবয়স্কদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। পরিস্থিতি অনুসারে সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। একটু ওয়েট করেন। আপনারা সবকিছু নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে এ রকম একটা পরিস্থিতি দেশে একটা প্যানিক ক্রিয়েট করার চেষ্টা করবেন না। এগুলো হলে প্যানিক হয়। সরকারের সদিচ্ছার কেনো অভাব নেই। উদ্যোগের কোনো অভাব নেই।’
এই সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘অলরেডি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কানেকশান বন্ধ করে অক্সিজেনের সরবরাহ যাতে ঠিক মতো থাকে সে ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘অক্সিজেন নিয়ে আমাদের দেশের সরকার যে স্টেপ নিয়েছে এখন এ রকম ক্রাইসিস হয়নি। আপনারা জনস্বার্থের মামলা নিয়ে আসছেন এ সমস্ত বিষয় নিয়ে। আপনারা জনগণকে সচেতন করেন স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলতেছেন যে, আপনি এক ডোজ নেন আর দুই ডোজ নেন মাস্ক আপনাকেই পরতে হবে।’
আদালত আরও বলেন, ‘টেলিভিশনে দেখছি গতকালকে ঢাকা শহরের প্রতিটি মার্কেটে যেভাবে লোক ছুটছে এবং কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে সেটাও দেখিয়েছে। আপনারা জনগণকে সচেতন করেন। কিভাবে চলতে হবে।’
অক্সিজেনের বিষয়ে আদালত বলেন, ‘সরকার হাসপাতালের অক্সিজেন দেয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন প্ল্যান্ট হচ্ছে। জেলার সদর হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সেন্ট্রাল লাইন নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সব জায়গায় হয়তো একইরকম অগ্রগতি নেই।’
আইসিইউর বিষয়ে আদালত বলেন, ‘মাঝখানে আইসিইউ নিয়ে কথা উঠছে। সরকার আইসিউ বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, একটি আইসিইউ চালাতে গেলে যে ধরনের ডাক্তার, টেকনিশিয়ান, নার্স প্রয়োজন হয়, এ ধরনের জনবলের অভাব আছে। এ ধরনের জনবল রাতারাতি বা সাতদিনের ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করতে পারবেন না।’
টিকা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘সরকার আরও তিনটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আসতে দিন (টিকা)। স্বাভাবিক হলে, আমাদের দেশে টিকা উৎপাদন হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কাজ কর্ম শুরু হলে নিশ্চয়ই সবাই টিকা পাবে। এ সব নিয়ে রিটে ইন্টারফেয়ার করলে সমাজে প্যানিক সৃষ্টি হবে।’
পরে আদালত রিট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।
এফএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ