ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

ব্যক্তি-কর্তৃপক্ষের খেয়াল-খুশি মতো চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০২১

কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা অসাংবিধানিক বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চের দেয়া গত ১৬ মার্চ রায়ের অনুলিপি রোববার (৪ এপ্রিল) প্রকাশ করা হয়েছে।

নরসিংদীর বাসিন্দা আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের বিদেশযাত্রার ওপর দুদকের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ বলে দেয়া রায়ে অভিমত দিয়ে ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করা অসাংবিধানিক। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারও ওপর এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।

রায়ে বলা হয়, বিদেশ যেতে কাউকে বিরত রাখতে যথাযথ আইন বা বিধি প্রণয়নের সময় এসেছে। এ বিষয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি প্রণয়ন না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে কাউকে বিদেশ যেতে নিষেধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে অনুমতি নিতে হবে।

বিদেশ যেতে বাধা দেয়ার বৈধতা নিয়ে আতাউর রহমানের করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ ঘোষণা করে পর্যবেক্ষণসহ এই রায় দেন আদালত।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, অর্থপাচারসহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় স্বার্থে কোনো ব্যক্তির বিদেশ যেতে নিষেধ করার ক্ষেত্রে যথাযথ আইন বা বিধি প্রণয়নের সময় এসেছে। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি ছাড়া কাউকে বিদেশ যেতে নিষেধ করা সংবিধান ও আইনসম্মত নয়।

এদিকে, হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল আবেদনের ওপর ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। একইসঙ্গে, ব্যবসায়ী আতাউর রহমানের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদনেরও শুনানি হবে।

হাইকোর্ট গত ১৬ মার্চ নরসিংদীর আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের বিদেশ যাওয়ার ওপর দুদকের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ বলে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বিধিতে অনুসন্ধান বা তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। আমাদের বিচারিক অভিজ্ঞতা বলে যে, কমিশন কিংবা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম আইন বা বিধিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারে না।

এটাও বাস্তবতা যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশ ত্যাগ করছে এবং পরবর্তীতে তাদের আর আইন-আদালতের সম্মুখীন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সকল বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে দুর্নীতি বা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলায় কিংবা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে বারিত বা তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সময়ের চাহিদাও বটে।

ওই আইন বা বিধিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশ ত্যাগে বারিত করার কারণ জানানো, গৃহীত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বক্তব্য/আপত্তি প্রদানের সুযোগ রাখতে হবে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারও ওপর এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতিতে কোনো তদন্ত সংস্থার দাফতরিক আদেশ দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ বা কার্যধারা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী। তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করাও ন্যায়সঙ্গত হবে।

রায়ে বলা হয়, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে যদি অপরাধলব্ধ বা অবৈধ সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করার বিধান থাকে সে ক্ষেত্রে একই যুক্তিতে অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেশ ত্যাগে বারিত করার সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়নে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট অভিমত এই যে, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিৎ হবে যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে যেকোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে বারিত করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করা; এবং যতক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের আইন বা বিধি প্রণয়ন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের কাছে এ ধরনের বারিত আদেশ প্রার্থনা করা এবং আদালতের অনুমতি গ্রহণ করা।

অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রতিনিধির মাধ্যমে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আবেদন জানালে আদালত সন্তুষ্টি সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যার মেয়াদ ৬০ দিনের অধিক হবে না বারিত আদেশ কিংবা স্বীয় বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত অন্য কোনো আদেশ প্রদান করতে পারবে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ ওই আদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে আদালত প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করতে পারবে।

রায়ে বলা হয়, সংবিধান ও আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতির আলোকে আমাদের অভিমত ব্যক্ত করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, কমিশন কর্তৃক আবেদনকারীর বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে গৃহীত ব্যবস্থা আইনসঙ্গত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং এর কোনো আইনগত কার্যকারিতা নেই।

জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আতাউর রহমানের সম্পদের তথ্য চেয়ে নোটিশ দেয়। এই নোটিশের পর ২২ অক্টোবর তিনি তার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করেন। দুদক সম্পদের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে। এই অনুসন্ধানকালে গতবছর ২০ ডিসেম্বর আতাউর রহমানের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক। এ অবস্থায় এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন আতাউর রহমান।

এফএইচ/এমএসএইচ/এমআরআর/জিকেএস