ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

মৃত নারীর ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টে মিলল পুরুষের তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:০১ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে সিলেটে এক মৃত নারীর কঙ্কালের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টে পুরুষের তথ্য মিলেছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ফরেনসিক বিভাগের দেয়া রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তবে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার একমাত্র আসামি ও নিহতের স্বামী ওমর ফারুক দোলনের জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।

আদালতের নথির সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সিলেটের জাফলং ভ্যালী বোর্ডিং স্কুল পার্শ্ববর্তী পাহাড়ী নালার পাশের জঙ্গল থেকে অজ্ঞাত মহিলার অর্ধগলিত কঙ্কাল উদ্ধার করে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্টে লাশের শরীর থেকে লাল রংয়ের বক্ষবন্ধনী এবং সোনালী রংয়ের চুড়ি আলামত হিসেবে জব্দের তথ্য দেয়া হয়েছে।

এরপর তার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওইবছরের ১ নভেম্বর স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের পরে নিজের কন্যা পুতুল নিখোঁজের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম।

পরদিন ৩ নভেম্বর পুলিশ নিহতের স্বামী ওমর ফারুক দোলনকে গ্রেফতার করে। এরও পরদিন ৪ নভেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেয়ের সঙ্গে তার স্বামীর পারিবারিক কলহ ছিল। কিন্তু ১৯ অক্টোবর টেলিফোনে ডেকে নিয়ে মাথায় আঘাত করে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পুতুলকে হত্যা করে ওমর ফারুক। মামলার পরদিন ৫ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ওমর ফারুক। ওই বছরের ১ নভেম্বর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। পরে ওই লাশটি কার তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়।

২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিএনএ প্রতিবেদন দেয়া হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা লাশটি কোনো পুরুষের। আর এটা পুতুলের বাবা রফিক মিয়া ও মা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে জৈবিক মিল নেই। এর কয়েকমাস পর ২০১৭ সালের ১২ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এর ভিত্তিতে আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরই মধ্যে সিলেটের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণও সম্পন্ন হয়।

ওই মামলায় আসামির জামিন শুনানিতে সিলেটের গৃহবধূ পুতুল হত্যা মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, লাশটা দেখে প্রতিয়মান হয় ২/৩ মাস আগে মৃত্যু হয়েছে। তবে, লাশটি কোনো নারীর বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়।

ডিএনএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাশটি কোনো পুরুষের। আর পুতুলের মা ও বাবার ডিএনএ’র সঙ্গে ওই লাশের ডিএনএ’র মিল নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আসামি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চলে? গত ৫ বছর ধরে এই আসামি কারাগারে আছে। এ কারণে জামিন আবেদন করা হয়।

এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী জানান, মামলার বাদী বলেছেন, ফোন করে তার মেয়েকে ডেকে নিয়ে যায় আসামি। এরপর লাশ উদ্ধার করা হয়। আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর সুরতহাল ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী লাশটি একজন নারীর। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় আসলো যে লাশটি একজন পুরুষের। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনএ প্রতিবেদন পাবার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন হাজার খানেক নমুনা পলিথিনের ব্যাগ ও কাগজে মোড়ানো খামে লেভেলবিহীন অবস্থায় রাখা আছে। এছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় লাশের ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। তিনি লাশটির কবর চিহ্নিত করার জন্য গেলেও তা পারেননি। কারণ অনেকদিন আগের কবর সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়। এ কারণে পুনরায় (দ্বিতীয় বার) ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়নি বলেও তদন্তকারীর (আইওর) বরাত দিয়ে জানান রাষ্ট্রপক্ষ।

এফএইচ/এসজে/এমকেএইচ