৪৮ হাজার শিক্ষকের টাইম স্কেল ৩ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ
২০১৩-২০১৪ সালে বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া (জাতীয়করণ) সারাদেশের ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকদের টাইম স্কেল সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে দায়ের করা রিট মামলা তিন সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত।
প্রধানবিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ অন্যান্য বিচারপতিগণের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) প্রকাশ পেয়েছে।
আদালতের আদেশ প্রকাশের বিষয়টি বুধবার (২০ জানুয়ারি) জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন শিক্ষকদের পক্ষের আদালতে লড়াইকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি একটি পজিটিভ রায়। কারণ সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে হাইকোর্ট বিভাগকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য বলেছেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ দেন। আদালতে ওই দিন রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘টাইম স্কেল’-এর সুবিধা ফেরত দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকরা রিট করেন। তখন হাইকোর্ট বিভাগ পরিপত্র স্থগিত করে রুল জারি করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
১৩ সেপ্টেম্বর চেম্বারজজ আদালত হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছিলেন। পরে ওই স্থগিতাদেশ তুলে দিতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিক্ষক নেতা মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। সেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগকে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।
তারও আগে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার নির্দেশ বহাল রাখায় গত বছরের ২০ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালত অবমাননার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, উপ-সচিব রওনক আফরোজা সুমা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন এবং হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলামকে এই নোটিশ পাঠানো হয়। ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের পক্ষে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সেলিনা আকতার।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি শিক্ষক মহাসমাবেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ বিধিমালা এসআরও নম্বর- ৩১৫ আইন ২০১৩ প্রণয়নপূর্বক গেজেট প্রকাশ করে। এরপর থেকে ওই বিধিমালার ২ (গ) নম্বর বিধিতে ৫০ শতাংশ বেসরকারি চাকরি কার্যকর ধরে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা, টাইম স্কেল, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতিসহ সব ধরনের সুবিধাদি ভোগ করে আসছেন।
মূলত ওই গেজেটের আলোকেই শিক্ষকরা টাইম স্কেল পেয়ে আসছেন। অথচ এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির পক্ষে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহীর গাঙ্গোপাড়া বাগমারার প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।
গত ৩১ আগস্ট ওই রিটের শুনানি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এরপর হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়সহ মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার জন্য হিসাব মহানিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আদালতের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার এই নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, একজন সরকারি চাকরীজীবী তার চাকরি জীবনে মোট তিনটি টাইম স্কেল (সরকারি বেতন স্কেল) পেয়ে থাকেন। তাই আমাদের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ায় আমরাও সরকারি বেতনভুক্ত হই এবং প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে টাইম স্কেল তথা সরকারি বেতনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই টাইম স্কেল পাওয়ার ফলে আমাদের বেতন একধাপ বৃদ্ধি পায়।
তিনি আরও বলেন, অথচ প্রায় আট বছর পর এসে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৩ থেকে এখন পর্যন্ত টাইম স্কেলের ফলে আমরা যে অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিলাম তা ফেরত চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। আর এ কারণেই আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সে নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলাম। সে রিটের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় গত ১ অক্টোবর এবং ২০ অক্টোবর এই বিষয়ে নোটিশ পাঠানো হয়।
এফএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ