বলাৎকারকে ধর্ষণ গণ্য করে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে লিগ্যাল নোটিশ
পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রদের বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এ জাতীয় অপরাধকে ধর্ষণের মতোই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
একই সঙ্গে, আলিয়া এবং কওমি মাদরাসায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করে শিশুদের মহিলা শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা নিতে নোটিশে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাদরাসা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ, কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়নে নোটিশে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) ই-মেইল ও ডাকযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার।
নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে ল' অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নোটিশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষক কর্তৃক ক্রমবর্ধমান ছাত্র ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দণ্ড বিধির ৩৭৫ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রদের বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এ ধরনের অপরাধে ধর্ষণের মতোই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, দেশে দুই ধরনের মাদরাসার (আলিয়া এবং কওমি) সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। এসব মাদরাসায় প্রায় কোটির কাছাকাছি শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব মাদরাসায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে পুরুষ শিক্ষকদের অধিনে। মাদরাসায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে কোমলমতি ছাত্ররা ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিক্ষক দ্বারা।
এসব যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ফলে অনেক ছাত্র মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। সম্প্রতি এসব ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আবার দেশের প্রচলিত আইনে পুরুষের সঙ্গে পুরুষের জোরপূর্বক যৌনসঙ্গমকে ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে এ ধরনের অপকর্মের শাস্তি অনেক কম থাকায় মাদরাসার শিক্ষকরা সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে।
লিগ্যাল নোটিশে দণ্ড বিধির ৩৭৫ ধারায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন করে পুরুষ কর্তৃক ছাত্রদের বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এ ধরনের অপরাধে ধর্ষণের মতোই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
একই সঙ্গে আলিয়া এবং কওমি মাদরাসায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করে বিশেষত শিশুদেরকে মহিলা শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নোটিশে বলা হয়েছে। এছাড়া মাদরাসা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে। কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়নের অনুরোধও করা হয়েছে।
নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, মাদরাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী এতিম এবং সমাজের বঞ্চিত শিশু-কিশোর। এ কারণে তাদেরকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটলেও আইনগত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ বা সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কাউকে দেখা যায় না। ফলে অপরাধীরা এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করেও সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি কোনো সভ্য সমাজে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এফএইচ/এএইচ/জেআইএম