ধর্ষণের অভিযোগে ৪ শিশু কারাগারে : মামলা স্থগিত
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ শিশুর বিরুদ্ধে করা মামলাটি সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
ওই মামলার কার্যক্রম আগামী ২২ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আাগমী ২২ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়।
এ সংক্রান্ত রুলের শুনানিতে ৪ শিশুকে জামিন না দিয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ প্রদানকারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি, থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রবেশন কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর রোববার (১১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শিশুদের বিষয়ে শুনানি শুরু হওয়ার সময় শুধু সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে বলেছেন আদালত। তবে, এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এরপর পর্যায়ক্রমে শিশুর ৪ অবিভাবক, বাকেরগঞ্জ থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), প্রবেশন কর্মকর্তা, শিশুদের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুনানিতে এফআইআর করার আগে ভিকটিম শিশু এবং অভিযুক্ত শিশুদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল কি না- মামলা করার জন্য বা শিশুদের গ্রেফতারে উপরের কোনো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিলা কি না- শিশুদের জন্য থানায় শিশু ডেস্ক আছে কি না- এসব বিষয় শুনানিতে সামনে আনেন আদালত।
এক পর্যায়ে শিশু আদালতের মামলার কার্যক্রম শিশু আদালতে না করে এখতিয়ার বর্হিভূত বিচারিক আদালতে পরিচালার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ওই ৪ শিশুকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়ারও আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) শিশুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে ওই চার শিশুকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় উচ্চ আদালতের তলবে সশরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন তিনি। এরপর এ বিষয়ে শুনানি হয়।
ওই আদেশে ১১ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় তাকে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। একইসঙ্গে, অভিভাবকসহ ওই ৪ শিশু ও বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার সকালে তারা হাইকোর্টে উপস্থিত হন।
এরপর আদালত পৃথকভাবে প্রত্যেকের কথা শোনেন। আইন অনুযায়ী যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনা করেন আদালত। এ বিষয়ে চার শিশুর বক্তব্য শুনতে তাদের বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রথমে আদালত ৪ শিশুকে খাস কামরায় নিয়ে তাদের কথা শোনেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৪ শিশুর কথা শোনেন দুই বিচারপতি। পরে এজলাসে বসে ওই ৪ শিশুর অভিভাবক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম, থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা এসআই বশির উদ্দিন খান, বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজের বক্তব্য শোনেন ও তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন।
আদেশের পর ম্যাজিস্ট্রেটের আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া চার শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে, ৪ শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছেন আদালত।
এর আগে বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ আমলে নিয়ে গত ৮ অক্টোবর রাতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারিসহ আদেশ দেন। শিশুদের জামিন, মুক্তি ও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর বাকেরগঞ্জে ৬ বছরের এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে কন্যাশিশুটির বাবা বাদী হয়ে ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় কন্যাশিশুটির খেলার সঙ্গী চার শিশুকে আসামি করা হয়। মামলার পর ওই চার শিশুকে গ্রেফতার করে বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ। পরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহ ওই ৪ শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদেরকে গত (৯ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।
চার শিশুর স্বজনদের দাবি, মামলায় এসব শিশুর বয়স ১০ থেকে ১১ বছর উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের বয়স ৮ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এফএইচ/এসএইচএস/এফআর/পিআর