ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

ইউনাইটেডে আগুন : মৃতদের পরিবারকে আপাতত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২০

রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে করোনা ইউনিটে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ, বিচারিক তদন্ত চেয়ে করা রিট আবেদন নতুন করে হাইকোর্টের নিয়মিত দ্বৈত বেঞ্চে উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া মনির হোসেনের পরিবার শুধু ২০ লাখ টাকায় সমঝোতায় সম্মত হয়েছিল বলে আগেই আদালতকে জানানো হয়। ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত বাকি চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা থাকছে না বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক।

এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের একক বেঞ্চের (ভার্চুয়াল) দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) এই আদেশ দেন।

আদালতে আজ ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান খান ও তানজীব উল আলম। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন- আইনজীবী অনীক আর হক, হাসান এম এস আজিম, মুনতাসির আহমেদ।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, যেহেতু ক্ষতিপূরণের রিট মামলাটি হাইকোর্টের একক বেঞ্চে (ভার্চুয়াল) শুনানি হয়েছিল, এখন হাইকোর্ট নিয়মিত দ্বৈত বেঞ্চে উপস্থাপন করার জন্য বলেছেন আপিল বিভাগ। সেখানে আগের ক্ষতিপূরণের আদেশ বহাল রাখার প্রয়োজন নেই। তবে তাদের স্বাধীন বিচারিক ক্ষমতায় নিজেদের মতো করে শুনানি নিয়ে আদেশ দিতে বলেছেন আদালত।

ইউনাইটেড হাসপাতালের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ আমাদের আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। বলেছেন, চেম্বার আদালতের যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সে স্থগিতাদেশ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু যারা রিট আবেদনকারী তারা নিয়মিত বেঞ্চে রিট আবেদন উপস্থাপন করতে পারবেন শুনানির জন্য। নিয়মিত বেঞ্চ এই রিট আবেদনের ওপরে আইনানুগভাবে যে আদেশ উপযুক্ত মনে করবে সে আদেশ দিতে পারবে। হাইকোর্টের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশের কোনো প্রভাব পড়বে না।

অর্থাৎ, ইউনাইটেড হাসপাতালকে আপাতত ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হচ্ছে না। কারণ হাইকোর্টের একক বেঞ্চের (ভার্চুয়াল) আদেশের কোনো কার্যকারিতা থাকছে না।

রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিনও মনে করেন আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হাইকোর্ট বেঞ্চের (ভার্চুয়াল) আদেশ কার্যকারিতা হারিয়েছে।

তিনি বলেন, ৩০ লাখ টাকা করে দেয়ার আদেশটি হয়েছিল একক বেঞ্চে (ভার্চুয়াল)। ওই বেঞ্চ যেহেতু রুল ইস্যু না করে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছে, তাই বিবাদী পক্ষের যুক্তি ছিল রুল ইস্যু না করে একক বেঞ্চ কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে পারে কি না। পরে আপিল বিভাগ বিবাদীদের (ইউনাইটেড হাসপাতাল) আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে আমাদের (রিট আবেদনকারীদের) বলেছে, নিয়মিত বেঞ্চে রিট উপস্থাপন করতে। নিয়মিত বেঞ্চ যেকোনো আদেশ দিতে পারবে। ফলে হাইকোর্টের আগের আদেশটির কার্যকারিতা থাকছে না।

তিনি জানান, আদালত আদেশে বলেছে, আবেদনকারীদের স্বাধীনতা আছে হাইকোর্টের যেকোনো রিট বেঞ্চে তা উপস্থাপন করার। আইন অনুসারে হাইকোর্টের স্বাধীনতা রয়েছে যেকোনো আদেশ দেয়ার।

রিটকারী পক্ষের আরেক আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট বেঞ্চ রুল জারি ছাড়াই ৩০ লাখ টাকা করে দিতে বলেছিল। আর ইতোমধ্যে নিয়মিত বেঞ্চ চালু হয়ে গেছে, তাই হাইকোর্টের নিয়মিত রিট বেঞ্চে আবেদনটি নতুনভাবে উপস্থাপন করে আবার শুনানি করতে বলেছে আপিল বিভাগ।

আদালত বলেছেন, যদি এই রিট আবেদনগুলো হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয় তাহলে আপিল বিভাগের আদেশের কোনো প্রভাব থাকবে না। রুল জারিসহ যেকোনো আদেশ দেয়ার স্বাধীনতা উচ্চ আদালতের রয়েছে।

এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক চারটি রিটের আইনজীবীরাই জানিয়েছেন হাইকোর্টের নিয়মিত রিট বেঞ্চে তারা রিট আবেদন উপস্থাপন করবেন।

আগুন লেগে কোভিড-১৯ ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে ইউনাইটেড হাসপাতালকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমঝোতায় আসতে না পারায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) গত ১৫ জুলাই এ আদেশ দেয়। সে আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত ২১ জুলাই ইউনাইটেডের আবেদনটি ১৬ অগাস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখে হাইকোর্টের আদেশটির কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয় চেম্বারজজ আদালত।

গত ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে (মূল ভবনের বাইরে স্থাপিত) আগুন লাগে। এ ঘটনায় পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল।

ওই পাঁচজন হলেন- মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন অ্যান্থনি পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন এবং নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ মে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও শাহিদা সুলতানা শিলা।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মো. মাহবুব এলাহী চৌধুরীর ছেলে আদনান চৌধুরী এবং ভারনন অ্যান্থনি পলের ছেলে আন্দ্রে ডোমিনিক পলও পরে সে রিটে অন্তর্ভুক্ত হন।

এরপর গত ২১ জুন রিয়াজুল আলমের স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার ১৫ কোটি ক্ষতিপূরণ চেয়ে আলাদা একটি রিট আবেদন করেন। তাতে এক কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

এ ঘটনার বিচারিক তদন্ত চেয়ে ১ জুন আরেকটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ ও হামিদুল মিসবাহ। কেন বিচারিক তদন্ত করা হবে না- সে বিষয়ে রুলও চাওয়া এ রিটে।

গত ২ জুন এসব রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৪ জুনের মধ্যে ঘটনার প্রতিবেদন দিতে বলে হাইকোর্ট।

এর মধ্যে পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা উঠে আসে। রাজউক জানায়, করোনাভাইরাসের জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করার অনুমতি নেয়নি ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। তাছাড়া হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। আর ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রতিবেদনে ওই ঘটনাকে স্রেফ ‘দুর্ঘটনা’ বলা হয়।

ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২৯ জুন এক আদেশে হাইকোর্ট ইউনাইটেড হাসপাতালকে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে বলে। সেই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলাটির তদন্তও দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

ইউনাইটেড হাসপাতালের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খানের মতে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা ক্ষতিগ্রস্ত সবার পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অর্থ দিতে চেয়েছিল, তাতে রাজি হয়নি চার পরিবার। অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া মনির হোসেনের পরিবার শুধু ২০ লাখ টাকায় সমঝোতায় সম্মত হয়।

পরে গত ১৫ জুলাই বিষয়টি হাইকোর্টকে জানানো হলে আদালত ৪ পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন।

এফএইচ/এইচএ/এফআর/পিআর/এমকেএইচ