ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

দণ্ডবিধি আইনের গর্ভপাত সংক্রান্ত ৫টি ধারা কেন বাতিল নয় : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২০

দণ্ডবিধি আইনের গর্ভপাত সংক্রান্ত পাঁচটি ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্ট চার বিবাদীকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জনস্বার্থে দায়ের করা এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক-উল-হাকিম এবং বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন সাংবাদিকদের বলেন, মূলত ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং পছন্দ নিশ্চিত করার জন্য এই রিট দায়ের করেছি। বাস্তবতা থেকে দেখলে মামলার ভয়ে অনেক ডাক্তার-নার্স গর্ভপাত করাতে চান না। তাই প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার-নার্সদের দিয়ে গর্ভপাত করানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় ডাক্তার-নার্সদের বাসায় নিয়ে গর্ভপাত করান অনেকে। এর ফলে গর্ভপাতটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না এবং পরবর্তীতে সেটি অন্যান্য রোগের কারণ হয়ে ওঠে। এ কারণে নারীদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেশি হয়।

‘এছাড়াও গর্ভপাতের সুযোগ না থাকায় পথশিশু ও এতিখানায় শিশুদের হার দিনদিন বাড়ছে। এই ধারাগুলোতে ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সুযোগ রাখা হয়নি। সংসার জীবনে অনেকের জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। মূলত ওই সময়ে সন্তান নেয়ার জন্য প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও আইনের বাধার কারণে তাদের বাচ্চার জন্ম দিতে হচ্ছে। তাই আইনের ধারাগুলো চ্যালেঞ্জ করে এ রিট পিটিশন দায়ের করি’—বলেন সৈয়দা নাসরিন।

এর আগে এ বিষয়ে সরকারকে গত ৩১ মে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পেয়ে গত সোমবার (১৭ আগস্ট) এ রিট দায়ের করেন সৈয়দা নাসরিন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত করায় এবং যদি সে গর্ভপাত সরল বিশ্বাসে উক্ত স্ত্রীলোকের জীবন বাঁচাবার উদ্দেশ্যে না করা হয়ে থাকে, তবে সে ব্যক্তি তিন বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে; এবং যদি স্ত্রীলোকটি শিশুর বিচরণ অনুভব করে, তবে সে ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

৩১৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ববর্তী ধারায় বর্ণিত অপরাধটি সংশ্লিষ্ট স্ত্রীলোকের সম্মতি ছাড়া সম্পাদন করে, স্ত্রীলোকটি আসন্ন প্রসবা হোক বা না হোক, তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা দশ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে কৃত কোনো কাজের ফলে সে স্ত্রীলোকটির মৃত্যু ঘটায়, তবে সে ব্যক্তি দশ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

৩১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শিশুর জন্মের পূর্বে এমন কোন কাজ করে, যাতে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ট হতে না পারে বা জন্মের পরে তার মৃত্যু হয় এবং অনুরূপ কাজের ফলে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ না হয় বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মৃত্যু হয় এবং যদি কাজটি মাতার জীবন রক্ষার জন্য সরল বিশ্বাসে কৃত না হয়, তবে সে ব্যক্তি দশ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

৩১৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কার্য করে, যদ্ধারা সে কোনো মৃত্যু ঘটালে অপরাধজনক নরহত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতো এবং অনুরূপ কার্যের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটায়, তবে উক্ত ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

এফএইচ/এইচএ/পিআর