চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ তদন্তে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে কমিটি
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা অবহেলা নিয়ে আসা অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য দেশের সকল জেলার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে, যেখানে ইমেইলে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। সেটির মাধ্যমে এখন স্বাস্থ্য বাতায়নে প্রতিদিন অভিযোগ জমা হচ্ছে।
এছাড়াও অক্সিজেন সিলিন্ডারের সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। যা ভবিষ্যতে মূল্য নির্ধারণ করে আদালতকে জানিয়ে দেয়া হবে।
হাইকোর্টের আদেশের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসানের সাক্ষরিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান, এএম জামিউল হক ফয়সাল, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান,মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল হুদা ও মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
হাসপাতাল-ক্লিনিকের অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের তথ্য জানিয়ে ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বলেন, অবহেলাজনিত কারণ বা রোগী ফেরতের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সে বিষয়ে তদন্ত করতে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের এবং জেলায় চার সদস্য বিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সেই কমিটি বিনা চিকিৎসায় রোগী ফেরতের ঘটনায় প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। অক্সিজেনের মূল্য ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রাথমিক প্রস্তাব। বিনা চিকিৎসার অভিযোগ দাখিল করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমেইল চালু রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট ১৬ আগস্ট দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
কমিটি গঠন ছাড়াও প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছে অধিদফতর। সেগুলো হলো-
>> যেসব অভিযোগ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মহানগরের জন্য ২টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল দুটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শন টিম পরিদর্শন করে এবং ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও প্রতিবেদন দাখিল করেনি। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, সব অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত পূর্বক অতিদ্রুত তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। বেসরকারি পর্যায়ে ঢাকা ট্রমা হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে পরিদর্শন পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ করা হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের জন্য এবং জেলার জন্য যথাক্রমে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং সিভিল সার্জনদেরকে সভাপতি করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। যাদেরকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগসমূহ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। টেলিফোন করে জানা যায়- নির্দেশনা মোতাবেক তারা তদন্ত কাজ শুরু করলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় এখনও কোনো প্রতিবেদন প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত কাজ শেষ করে অবিলম্বে প্রতিবেদন অধিদফতর বরাবর দাখিল করা হবে মর্মে জানানো হয়।
>> ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা যাতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ সহজেই স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানাতে পারেন সেজন্য অভিযোগ গ্রহণের সুবিধার্থে পৃথক একটি ই-মেইল খোলা হয়েছে- [email protected]. এর বহুল প্রচারের জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় ইতোমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
>> অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা ও রিফিলিংয়ের খুচরা মূল্য নির্ধারণের জন্য সিএমএসডিকে ইতোপূর্বে পত্র প্রেরণ করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিএমএসডি গত ১৯ জুন জানায়- এই বিষয়ে সিএমএসডির দায়িত্বের পরিধি বা সংশ্লিষ্টতা কতটুকু তা অনিশ্চিত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এস আর তালিকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ বিষয়ে অধিদফতর পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
>> ক্যানসার, কিডনি ডায়ালাইসিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত সকল রোগীর ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজনে করোনা পরীক্ষা অত্যাবশ্যক বিধায় সে সমস্ত রোগীদের করোনা পরীক্ষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ এবং বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ও নার্স অ্যাসোসিয়েশন বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসমূহের বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগসমূহের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় প্রদানের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এর আগে কয়েকটি রিটের শুনানি নিয়ে আদালত অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ ও অবহেলা কিংবা রোগী ফেরতের ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে নির্দেশের ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদন দাখিল করল স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে আগামী ১৬ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। সেদিন এ বিষয়ে আরও শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এফএইচ/এনএফ/এফআর/জেআইএম