১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ : ৪ শর্তে রাশেদুল হক চিশতীর জামিন
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা তিন মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতের জামিন শর্তসাপেক্ষে বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে আদালত বলেছেন, যামিনে থাকতে হলে চারটি শর্ত পালন করতে হবে তাকে। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে তার জামিন বাতিল হয়ে যাবে।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-তিনি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডে (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঢুকতে পারবেন না; তার পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা রাখতে হবে; মামলার তদন্তে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এবং অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
মঙ্গলবার (২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ ভার্চুয়াল শুনানিতে এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী শামসুন নাহার কনা। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশিদ আলম খান। আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, শেখ বাহারুল ইসলাম ও কবির শাহরিয়ার বিপ্লব।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, রাশেদুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা তিন মামলায় বিচারিক আদালতের জামিন চার কন্ডিশনে বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এর একটি ভঙ্গ হলে তার জামিন বাতিল হয়ে যাবে। তবে, তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা থাকায় তিনি আপাতত জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন না।
এর আগে গত ২৮ মে ১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত করে তা পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর জামিন স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট।
এই মামলায় গত ১৯ মে ঢাকার একটি আদালত তাকে জামিন দিয়েছিলেন। ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৮ মে হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ জামিন কোর্ট নিয়মিত খোলা না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল এ মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকিং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাহবুবুল হক চিশতী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্ত্রী, সন্তান ও নিজের নামে এবং নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ২৫টি হিসাব খোলেন। পরে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের সহায়তায় গ্রাহকদের হিসাব থেকে পাঠানো ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা ওই ২৫টি হিসাবে স্থানান্তর করেন। এসব টাকা নিজেদের হিসাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও লেয়ারিংয়ের পাশাপাশি নিজেদের নামে কেনা শেয়ারের দাম পরিশোধ করেন।
এজাহারে বলা হয়, লেনদেনের একটি বড় অংশই হয়েছে গুলশান শাখা থেকে। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বখশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের চলতি হিসাবে গুলশান শাখায় প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা জমা হয়। এর পুরোটাই নগদে তুলে নেয়া হয়। বাকি ২১ কোটি টাকা বিভিন্ন হিসাব থেকে লেনদেন হয়।
মামলার পরপরই চিশতীসহ চারজনকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দুদক। অন্য তিনজন হলেন-চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ব্যাংকের এসভিপি জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট মাসুদুর রহমান খান।
পরে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর ফারমার্স ব্যাংকের ১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলায় ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীসহ (বাবুল চিশতী), মাহবুবুল হক চিশতীর স্ত্রী রুজী চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ফারমার্স ব্যাংকের চাকরিচ্যুত এসভিপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও চাকরিচ্যুত ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান খান বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ