সারাদেশে টিসিবির চাল ও পণ্য বিক্রি করতে নোটিশ
করোনার লকডাউনে টিসিবির ১০ টাকা দামের চাল ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি দেশের প্রত্যেক লেভেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রির ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) চেয়ারম্যানকে ই-মেইলে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউসার এ নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব।
নোটিশ পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে অন্যথায় ফাউন্ডেশন জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নোটিশে বলা হয়, সারাদেশের টিসিবি অর্থাৎ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের মাধ্যমে কম দামে ১০ টাকা মূল্যের চাল এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়। সেটা বর্তমানে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন এবং কিছু কিছু পৌরসভা এলাকার মধ্যে সীমিত পরিসরে হচ্ছে।
যে কারণে এর সুফল সারাদেশের নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারছে না বা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রকর্তৃক কম দামে খাদ্যদ্রব্য কেনার অধিকার বাংলাদেশের শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার মানুষের নয় বরং দেশের যেকোনো প্রান্তে বসবাসকারি সাধারণ মানুষের ক্রয় করার অধিকার।
তাই করোনা বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি ছুটি চলছে এবং সারাদেশে লকডাউন চলছে। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ করে নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ যারা আছেন তারা ব্যাপক আর্থিক অসুবিধার সম্মুখীন এবং তারা ক্রাইসিসে ভুগছে। কিন্তু এ টিসিবির মাধ্যমে কম দামে যেসব পণ্য বিক্রি করা হয় সেটা যদি শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাদেশের উপজেলা লেভেলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয় তাহলে খাদ্য সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।
অন্যদিকে যেহেতু এ উদ্যোগটা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য তাই এ বিষয়টিকে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার মধ্যে সীমিতকরণ অন্যান্য সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। তাদেরও অধিকার আছে কম দামে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করার।
নোটিশে বলা হয়, খাদ্যের অধিকার, জীবন ধারণের অধিকার, আইনত ন্যায্য অধিকার পাওয়া আমাদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। এছাড়াও আমাদের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসাকে মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে রাষ্ট্র উহার নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
কাজেই কম মূল্যে রাষ্ট্রীয় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন অথবা কিছু নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের লংঘন, মানবাধিকারের এবং মৌলিক অধিকারের লংঘন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কম দামে জিনিসপত্র বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জিনিসপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশের যে কোনো এলাকার মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। তাদেরকে বঞ্চিত করার কোনো আইনগত অধিকার কারও নেই। বিষয়টি বৈষম্যমূলক এবং মানুষের জীবনধারণের যে মৌলিক অধিকার রয়েছে সেটার পরিপন্থী।
এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ই-মেইলের মাধ্যমে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, টিসিবির পণ্য বিক্রি শুধু সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের প্রত্যেক উপজেলা পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রির ব্যবস্থার জন্য আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ফাউন্ডেশন জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবে।
এফএইচ/এএইচ/পিআর