করোনা: বার কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে আইনজীবীরা
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধের আওতায় রয়েছে আদালতও। এই পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে সেটাও বলা মুশকিল। করোনা সংক্রমণ রোধের পর অবস্থা স্বাভাবিক হলেও বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কা যে আসবে, সেটা পরিষ্কার।
এ অবস্থায় আইনজীবীদের মাঝে এক রকম হতাশা কাজ করছে। কারণ অনেক আইনজীবী আছেন তারা মাসে যা আয় করেন তা প্রতি মাসেই ফুরিয়ে যায়। অপরদিকে আত্মসম্মানের কারণে কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতেও পারছেন না অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে তারা তাকিয়ে আছেন আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং আইনজীবী সমিতির দিকে।
তবে আইনজীবীদের জন্য আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আইনজীবীদের জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত তাদের জন্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারবো।
আইনজীবী আব্দুল হান্নান ভুইয়া বলেন, গত ২০ দিন ধরে ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছি। এ অবস্থা কয়দিন যায় আল্লাহ ভালো জানেন। তবে এ অবস্থা বেশি দিন চললে মুশকিল হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন এক ধরনের বন্দী অবস্থায় রয়েছি। উন্নত বিশ্বে বন্দীদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
আইনজীবী এম হেলাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আদালত প্রাঙ্গণ বন্ধ রয়েছে। রিমান্ড, জামিন অথবা কোনো ধরনের শুনানিই করতে পারছি না। আইনজীবীদের তো নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। মামলার শুনানির ওপর আমাদের আয় হয়। দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ থাকায় কোনো কিছুই হচ্ছে না। এদিকে আয় না থাকায় আমাদের চলাফেরা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা আইনজীবী সমিতি আমাদের আমাদের জন্য প্রণোদনা হিসাবে কিছু টাকা দিতে পারেন।
আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে আদালত বন্ধ। প্রতিদিন আদালতে গেলে কিছু আয় উপার্জন হতো। পুরনো মামলার হাজিরার পাশাপাশি নতুন কিছু কাজ আসতো। কিন্তু এখন সবই বন্ধ। সামনে রমজান ও ঈদুল ফিতর। কতদিন এই অবস্থা থাকে বলা যায় না। দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি না ফিরলে আর্থিক চাপ বাড়বে। এই অবস্থায় দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই প্রণোদনা দিচ্ছে, প্রণোদনার আওতায় আইনজীবীদেরও রাখা উচিত। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনায় বার কাউন্সিল এবং আইনজীবী সমিতিগুলোও বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে।
অনেক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় আমাদের অবস্থা এখন অনেক খারাপ। পেশার দিকে তাকিয়ে আমরা চক্ষু লজ্জায় কারো কাছে কিছু বলতে পারছি না। কারো কাছে হাতও পাততে পারছি না। এ অবস্থায় বার কাউন্সিল ও আইনজীবী সমিতি যদি আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে অনেক উপকার হয়।
অনেকে বলেন, আমরা যারা বারে আইন প্র্যাকটিস করি, তাদের মাসিক নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। দৈনিক আদালতে গিয়ে যা আয় হয় সেটা দিয়ে আমাদের চলতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ থাকায় আমরা মুশকিলে পড়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের কী যে হবে তা আল্লাহ তাআলায় ভালো জানেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নজীব উল্লাহ্ হিরু জাগো নিউজকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশের আদালত বন্ধ আছে। এতে আইনজীবীদের চলাচল কষ্ট হয়ে পড়ছে। আমরা তাদের স্বার্থে কিছু করার চেষ্টা করছি। দেশের অনেক আইনজীবী সমিতিকে আমি বলেছি যে, সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে সেই টাকা দিয়ে অসহায় আইনজীবীদের সহযোগিতা করতে।
তিনি আরও বলেন, এখন তো সব কিছু বন্ধ। বার কাউন্সিলের মিটিং করার পরিস্থিতি নেই। যেহেতু ব্যক্তিগত প্রোটেকশন নেই, তাই সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারপরও আমরা টেলিফোনে যোগাযোগ করছি। আমি আইনজীবীদের সংকটের বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, আইনজীবীদের সহায়তার বিষয়টি তিনি চিন্তাভাবনা করছেন। সরকারের সাধারণ ছুটি শেষ হলেই আমরা বার কাউন্সিল একটি জরুরি সভা ডেকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব বলে আশা করছি। আর এর মধ্যে যদি পরিস্থিতি ভালো না হয় ,তাহলে আমরা মোবাইলে কার্যকম চালাবো।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দেশের সব আইনজীবী সমিতির (বার) নবীন ও বিপদগ্রস্ত আইনজীবীদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের রিলিফ ফান্ড থেকে অনুদান দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংস্থাটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে দেশের সব আদালত বন্ধ থাকায় জুনিয়র আইনজীবীদের সহায়তার জন্য ৩০০ কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবার হোসেন বলেন, ঢাকার অসহায় আইনজীবীদের নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত তাদের জন্য ভালো একটা ব্যবস্থা করতে পারবো।
মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১২ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩০ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে।
জেএ/এমএসএইচ/এমকেএইচ