চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে খালেদার জামিন আবেদন খারিজ
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করানোর জন্য যাওয়ার দাবিতে জামিন চেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদেশে আদালত বলেন, ‘তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, চাইলেও সাধারণ নাগরিকের মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। তা ছাড়া আমরা এর আগে হাইকোর্টে জামিন আবেদন খারিজ করেছিলাম। এবারের জামিন আবেদনে নতুন কোনো গ্রাউন্ড নেই। তাই জামিন আবেদন খারিজ করা হলো।’
তবে, খালেদা জিয়া চাইলে মেডিকেল বোর্ডকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি চাইলে বোর্ডে নতুন কোনো চিকিৎসককেও অন্তর্ভুক্ত পারবেন।
রাষ্ট্রপক্ষ, আসামি ও দুদকের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন খালেদার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা, মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট আসিফা আশরাফি পাপিয়া, মো. কামরুল ইসলাম সজল, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, মির্জা আল মাহমুদ, মজিবুর রহমান মিঞা, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, ফজলুল করিম মন্ডল জুয়েল, মাসুদ আহমেদ সাইদ, একেএম এহসানুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান ও জিএম জাকির আক্তার।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জামিন শুনানির এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেয় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার পর থেকে শুনানি শুরু হয়।
চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে ১৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনে বলা হয়, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে চান তিনি।
এর আগে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় তার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে, আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি দেন, তাহলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অন্য তিন আসামিরও।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিন আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।
এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটিও খারিজ হয়ে যায়।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।
এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম