ট্রাইব্যুনালে বাবা হত্যার বিচার চাইলেন ছেলে
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেনসহ (৭৭) ৫ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী এম রুহুল আমিন (৬৭) তার জবানবন্দি পেশ করেছেন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী তার জাবনবন্দি পেশ করেন। পরে সাক্ষীকে জেরার জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন।
আদালতে আজ (সোমবার) রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এবং তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে ডিফেন্স টিমের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও গাজী এইচএম তামিম এবং পালাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জবানবন্দিতে এম রুহুল আমিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমার বাবা ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আমজাদসহ অন্যান্য রাজাকাররা ধরে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন সেখানে পড়ে থাকা লাশ পেয়ে আমরা তার দাফন করি। তিনি (ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাস) আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া রাজাকাররা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমার এক নিকট আত্মীয় ময়েন উদ্দিন ও আয়েন উদ্দিন নদীতে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে যান। অন্যদিকে ধরে নিয়ে যাওয়া আরও তিনজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়। আমি আমার বাবাসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত সকল অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলায় তদন্ত চূড়ান্ত করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ৬টি হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হয়। ২৪ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে ২৯ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারের কাজ শুরু হয়।
ওইদিন শুনানি শেষে মামলায় ওপেনিং স্ট্রেটমেন্ট ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করা হয়। নির্ধারিত দিনে আজ সোমবার মামলার প্রথম সাক্ষী তার জবানবন্দি পেশ করেন।
মামলার তথ্য থেকে জানা গেছে, আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় মনিরামপুর থানার ভোজগাতী, দিকদানা, নোয়ালী, দুর্বাডাঙ্গা, সরষকাটি গ্রাম এবং চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহর নদের ওপর স্থাপিত ব্রিজে অপরাধ সংঘটিত করে। তাদের বিরুদ্ধে ১১ জনকে হত্যা ও ৪ জনকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ মামলায় আসামি ছিল ৫ জন। তাদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন একজন, বাকিরা পলাতক। গ্রেফতার থাকা আসামি হলেন- মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা (৭৭)। গ্রেফতারের স্বার্থে পলাতক বাকি চার আসামির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
মামলাটি তদন্ত করেছেন আব্দুর রাজ্জাক খান। ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মামলার তদন্ত করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ৬ খণ্ডের মোট ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ৪০ জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত চারটি অভিযোগ হচ্ছে- যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানাধীন উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী মো. ময়েন উদ্দিন ওরফে ময়না এবং মো. আয়েন উদ্দিন ওরফে আয়েনকে অপহরণ, একই গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদানকারী ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে হত্যা, গাইদঘাট গ্রামের সুরত আলী বিশ্বাস ও মোক্তার বিশ্বাসকে অপহরণ করে হত্যা এবং মাগুরা জেলার শালিখা থানার সীমাখালীর চিত্রা নদীর খেয়াঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে আটক করে হত্যা।
এফএইচ/আরএস/এমকেএইচ