আল্লাহর দলের চার সদস্য রিমান্ডে
রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার ‘আল্লাহর দল’ (আল্লাহর সরকার) জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্যকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বুধবার তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় মিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার সুজন সরকার। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম (৩৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও মো. শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭)।
বুধবার ভোরে দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন এবং ভ্রান্ত ইসলামী সংগীতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। জঙ্গি কার্যক্রমকে জোরদারের জন্য আর্থিক কাঠামো তৈরি করেছেন তারা। সংগঠনটির যাবতীয় আর্থিক মূলধনের একটি বড় অংশ নামে-বেনামে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে র্যাব।
আটক সিরাজুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ১৯৯৯ সালে মতিন মেহেদীর কাছে বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সংগঠনের সদস্য হওয়ার পর ‘গ্রাম নায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পাবনা, ঝিনাইদহ, খুলনা, রাজশাহী ও নওগাঁয় দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে যুগ্ম অধিনায়ক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছেন সিরাজুল। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির মামলা মোকাদ্দমাসহ বিবিধ বিষয়াদি তদারকি করেন।
১৯৯৭ সালে গাইবান্ধার এক জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে বর্ণিত জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন মনিরুজ্জামান। সংগঠনের আমির মতিন মেহেদীর কাছে ঢাকায় বায়াত গ্রহণ করেন। জঙ্গি সদস্য হওয়ার কিছুদিন পরে গ্রাম নায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে বিভিন্ন পদে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও খুলনায় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘উপ-অধিনায়ক’ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছেন। এই জঙ্গি সংগঠনটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দাওয়াতি ব্যবস্থাপনা, রিক্রুটিংসহ বিভিন্ন বিষয়াদি দেখাশোনা করেন মনিরুজ্জামান।
আটক হাফিজুর রহমান সাগর খুলনার খালিশপুর থানায় ‘আঞ্চলিক নায়ক’ এবং পরে ‘জেলা নায়ক’ পদে দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন শফিউল মোযনাবীন তুরিন। ২০১০ সালে তার দুই বন্ধুর মাধ্যমে ‘আল্লাহর দল’ জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
র্যাব অধিনায়ক আরও জানান, ১৯৯৫ সালে মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে ‘আল্লাহর দল’ নামক জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠে এবং ২০১৪ সালে মতিন মেহেদীর গোপন নির্দেশে এটি ‘আল্লাহর সরকার’ নামকরণ করা হয়।
তাদের মতে, বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা চলছে বিধায় তারা ঈদ, কোরবানি, হজ ইত্যাদি পালন করেন না, জুমার নামাজ আদায় করেন না এবং প্রতি ওয়াক্তে শুধু দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এমনকি ইসলামের কালেমার সাথে শেষ নবীর নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নমত রয়েছে।
তারা মনে করেন, বর্তমান সময়ের জন্য মতিন মেহেদী আল্লাহর বিশেষ দূত হতে পারেন। এই সংগঠনটি গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী নয়। তাদের মূল লক্ষ্য অনুকূল পরিবেশে দেশের মধ্যে নাশকতায় লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা এবং তাদের নিজেদের কাঠামো অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি পেনড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের লিফলেট, দাওয়াতপত্র ও আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি টালি খাতা উদ্ধার করা হয়।
জেএ/এসএইচএস/এমএস