গ্রেফতারের পরদিনই তাসভীরের জামিন
বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভবনটির অন্যতম মালিক ও কাসেম ড্রাইসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসভীর-উল-ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। নকশা জালিয়াতি অভিযোগের মামলায় গতকাল (রোববার) তাকে গ্রেফতার করেছিল দুদক।
সোমবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশ তাকে হাজির করলে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আবুবকর সিদ্দিক। অপরদিকে তার আইনজীবী এহসানুল হক সামাজী জামিনের আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধীতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গতকাল রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে দুদক তাকে গ্রেফতার করে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওই সময় প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে মামলার তিন নম্বর আসামি তাসভীর-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এফআর টাওয়ার নির্মাণে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৫ জুন দুটি মামলা করে দুদক। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকিকে দায়ের করা ওই মামলায় ২৩ জনকে আসামি করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম আসামি হলেন কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভবনটির অন্যতম মালিক তানভীর-উল-ইসলাম।
মামলা দুটির বাকি ২২ আসামি হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদিম ও কে এ এম হারুন, এফ আর টাওয়ারের মালিক এস এম ফারুক, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মুকুল, রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান, সাবেক অথরাইজড অফিসার-২ সৈয়দ মকবুল আহম্মেদ, সৈয়দ নাজমুল হুদা, সামছুর রহমান, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী, নজরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (এস্টেট) রেজাউল করিম তরফদার ও আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক পরিচালক (এস্টেট) শামসুল আলম ও আব্দুল্লা আল বাকী, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট) মুহাম্মদ শওকত আলী, সাবেক সহকারী পরিচালক শাহ মো. সামসুল আলম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (এস্টেট) জাহানারা বেগম ও মোফাজ্জেল হোসেন, সাবেক পরিদর্শক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, অবৈধ নকশায় তৈরি হয়েছে এফআর টাওয়ার। ১৫তলা থেকে গড়ে তোলা হয়েছে ২৩তলা। ১৫তলা নকশার অনুমোদনও মানা হয়নি কোনো নীতিমালা। নেই ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের অনুমোদন।
এছাড়া ১৮ থেকে ২৩তলা নির্মাণের কোনো তথ্যই নেই রাজউকের কাছে। জমির মালিক ও ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি প্রশাসনের নাকের ডগায় নিজ সিদ্ধান্তে নির্মাণ করেছে বাকি পাঁচতলা। যারা আসামি হয়েছেন তারা ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
চলতি বছরের ২৮ মার্চ দুপুরে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এতে ২৭ জন নিহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই বনানীর এফআর টাওয়ার নকশা অনুমোদনে জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক হোসেন ও রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, কাশেম ড্রাইসেল ব্যাটারির মালিক ও এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভীর-উল-ইসলাম এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট ইমারত পরিদর্শকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
জেএ/আরএস/এমকেএইচ