ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

গুঁড়া দুধে কী আছে সেটাও দেখা দরকার : হাইকোর্ট

মুহাম্মদ ফজলুল হক | প্রকাশিত: ০৭:৪২ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৯

আমরা শুধুই তরল দুধ নিয়ে ব্যস্ত। গুঁড়া দুধে কী আছে তাও দেখা দরকার- এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

দুধে সিসার উপস্থিতি নিয়ে সুয়োমোটো এক মামলার শুনানিতে রোববার (২৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালত আরও বলেন, আমরা চাই, দেশীয় দুধের বাজার যেন প্রসারিত হয়। তবে যেন অনিরাপদ না হয়। বিদেশি গুঁড়া দুধ যেন দেশীয় বাজার দখল না করে। দেশীয় কোম্পানি ও খামারিরা ভালো থাকুক। তবে দুধ উৎপাদনের মান ঠিক রাখতে হবে।

আদালতে এদিন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআই’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মামুন মাহবুব।

শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আমরা শুধুই তরল দুধ নিয়ে ব্যস্ত। গুঁড়া দুধে কী আছে তা দেখা দরকার। আমরা চাই না, দেশীয় দুধ বন্ধ হওয়ার কারণে বিদেশি গুঁড়া দুধে বাজার সয়লাব হয়ে যাক। বিদেশি গুঁড়া দুধ বাংলাদেশের বাজার দখল করুক- এটা আমাদের কাম্য নয়।

আদালত বলেন, দেশীয় খামারিদের দুধ বন্ধ হোক, এটা চাই না। আমাদের চাওয়া, দেশীয় খামারিদের দুধের উৎপাদনের বিস্তার আরও বাড়ুক। তবে সেটা হতে হবে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। কোনোভাবেই তা জনস্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ না হয়। আমাদের চাওয়া, দেশে মানুষ যেন ভালো থাকে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফরিদুল ইসলাম বলেন, গুঁড়া দুধ পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন আদালত। তবে আদালত বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব আপনাদেরও (বিএসটিআই)। আদালতের কেন আদেশ দিতে হবে? আইনে আপনাদেরইতো ক্ষমতা দেয়া আছে। আপনারা কেন সেটা পরীক্ষা করছেন না?

জবাবে এ আইনজীবী বলেন, আমরা পরীক্ষা করতে গেলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীরাই প্রশ্ন তুলবে যে, কেন আমরা তা পরীক্ষা করছি। আদালত আদেশ দিলে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।

বিএসটিআই’র আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আরও বলেন, দুধে যে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তার অধিকাংশই সহনীয় মাত্রায়। আর সিসা পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে সামান্য কিছু ওপরে। তাই এ দুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কি-না, তা পরীক্ষা করে মতামত জানতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, বিদেশে প্রতি বছর ২-৩ বার দুধ পরীক্ষা করা হয়। এটা দেখার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে। আমাদের দেশেও এমন একটি কমিটি করার জন্য আদালতের আদেশ চাচ্ছি।

পরে আদালত আগামী ২০ অক্টোবর আদেশের জন্য দিন ধার্য করে বলেন, হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কী অবস্থা দাঁড়ায়, তা দেখা দরকার। এরপর আমরা আদেশ দেব।

পরে এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, দুধ নিয়ে গবেষণা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে হুমকি দিয়েছে কোম্পানিগুলো। তারা লিগ্যাল নোটিশও দিয়েছে। বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছি। পরে আদালত আগামী ২০ অক্টোবর আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।

গত ১৬ জুলাই ১০ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার চাইতে বেশি সিসার উপস্থিতি রয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ প্রতিবেদন উপস্থাপনের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে বলেন।

গত মঙ্গলবার আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম তাদের পদক্ষেপের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ১০টি মামলা করেছেন ১০ কোম্পানির বিরুদ্ধে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘গাভির দুধ ও দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, সিসা!’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাভির দুধে (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সঙ্গে প্যাকেটজাত গাভীর দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত। বাদ পড়েনি দইও। দুগ্ধজাত এ পণ্যেও মিলেছে সিসা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব ফলাফল উঠে এসেছে। সংস্থাটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভীর খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে এ জরিপের কাজ করেছে। ওই প্রতিবেদন নজরে আসার পর ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।

এফএইচ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন