পাস্তুরিত দুধ : হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করছে রাষ্ট্রপক্ষ
বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী জিনাত হক।
তিনি বলেন, সব পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণন বন্ধে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন আমরা সেই আদেশ স্থগিত চেয়ে শিগগিরই আবেদন করব।
এর আগে রোববার (২৮ জুলাই) মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান সিসা, অ্যান্টিবায়োটিক থাকায় ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। পাঁচ সপ্তাহের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ কেনা ও বিক্রয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। ওই দিন আদালতের শুনানিতে বিএসটিআইর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ও আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল জিনাত হক।
গত ১৪ জুলাই বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত (প্যাকেটজাত) সব দুধের নমুনা সংগ্রহ করে অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কি না- তা এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে চার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ল্যাব চারটি হলো- ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগার। এরপর চার সংস্থার প্রতিবেদন হাতে নিয়ে এগুলো আদালতে জমা দেয় বিএসটিআই।
এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তৈরি করা (বিসিএসআইআর ও পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবে পরীক্ষা করা) ১১ কোম্পানির দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদনও আদালতে দেয়া হয়। একইসঙ্গে উপস্থাপন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের প্রতিবেদনও।
২০১৮ সালের ১৬ মে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. তানভীর আহমেদ।
এ রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ মে এক আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বিএসটিআইয়ের দেয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন- গণমাধ্যমে সংস্থাটির আইনজীবীর দেয়া এমন বক্তব্যে ৯ জুলাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন আদালতের আদেশ ছাড়া দুধ নিয়ে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিছু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও পাস্তুরিত দুধের ১০ নমুনার সবকয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে ১৩ জুলাই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
তার এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত চারটি ল্যাবে পরীক্ষা করে তা দাখিল করার নির্দেশ দেন। প্রতিবেদন দাখিলের নির্ধারিত দিন রোববার দুধে সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়ায় ১৪ কোম্পানির দুধ উৎপাদন ও বিক্রি পাঁচ সপ্তাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
এফএইচ/বিএ/পিআর