ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন-বিক্রিতে ৫ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:১৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৯

মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় সরকারের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই অনুমোদিত ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রি ৫ সপ্তাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাজারে থাকা এসব দুধ কেনা-বেচায় সতর্ক থাকতেও বলেছেন আদালত।

একই সঙ্গে পাস্তুরিত দুধ কোম্পানির দুধে ক্ষতিকারক সীসা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব পাওয়া ১৪ কোম্পানির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নয়- জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এ ১৪টি প্রতিষ্ঠানই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছিল। ফলে এ ৫ সপ্তাহ দেশে বৈধভাবে পাস্তুরিত দুধ বিক্রির কোনো সুযোগ থাকল না।

সেই সঙ্গে, জনসাধারণকে পাস্তুরিত দুধ কেনা ও খাওয়ায় ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২৫ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

লাইসেন্সধারী সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না সে বিষয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবের পরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি শেষে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ বিএসটিআইর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার অনীক আর হক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল জিনাত হক।

আদেশের পর ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘১৪টি ব্র্যান্ডের দুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও আমাদের কৃষি খাদ্য, মৎস খাদ্য আইনে গবাদি পশু বা যে কোনো পশুর ওপরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তারপরও দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে বিসিএসআইআর ও আণবিক শক্তি কমিশনের ল্যাবের যে রেজাল্ট, সেখানে দুধের মধ্যে হেভি মেটাল, স্পেশালি লেড অর্থাৎ সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আদালত আজ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল ইস্যু করেছেন যে, দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে সেগুলোর উৎপাদন কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং রাইট টু লাইফের পরিপন্থি হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুলের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য এ ১৪টি লাইসেন্সধারী কোম্পানির দুধের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ এবং সেই সঙ্গে সাধারণ ক্রেতারা যেন এ দুধ না খায় সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর সঙ্গে সঙ্গে বিএসটিআইকে বলা হয়েছে তাদের যে মানদণ্ড রয়েছে সেটাকে আপডেট করার ব্যাপারে কী স্টেপ নিয়েছে সেটা জানানোর জন্য।’

গত ১৪ জুলাই বিএসটিআই অনুমোদিত বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত (প্যাকেটজাত) সব দুধের নমুনা সংগ্রহ করে অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কি না -তা চার প্রতিষ্ঠানকে এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে চারটি ল্যাবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

চারটি ল্যাব হলো- ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগার। এরপর চার সংস্থার প্রতিবেদন হাতে নিয়ে এগুলো আদালতে জমা দেয় বিএসটিআই।

এ ছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তৈরি করা (বিসিএসআইআর ও পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবে পরীক্ষা করা) ১১ কোম্পানির দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদনও আদালতে দেয়া হয়। একইসঙ্গে উপস্থাপন করা হয় ঢাবি অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের প্রতিবেদনও।

২০১৮ সালের ১৬ মে বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. তানভীর আহমেদ।

এ রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ মে এক আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। কিন্তু কোনো শুনানির আগেই সেদিন তিনি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটিশনের (বিএসটিআই) দেয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন- গণমাধ্যমে সংস্থাটির আইনজীবীর দেয়া এমন বক্তব্যে ৯ জুলাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

ওইদিন আদালতের আদেশ ছাড়া দুধ নিয়ে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়।

এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিছু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও পাস্তুরিত দুধের ১০ নমুনার সবকয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে ১৩ জুলাই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তার এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত চারটি ল্যাবে পরীক্ষা করে তা দাখিল করার নির্দেশ দেন। প্রতিবেদন দাখিলের নির্ধারিত দিন রোববার দুধে সীসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়ায় ১৪ কোম্পানির দুধ উৎপাদন ও বিক্রি ৫ সপ্তাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত।

এফএইচ/এনডিএস/পিআর/জেআইএম

আরও পড়ুন